ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

চা বিক্রি করে ২৬ দেশ ভ্রমণ

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৯ মে ২০২৪   আপডেট: ১৩:২৩, ৩ জুন ২০২৪
চা বিক্রি করে ২৬ দেশ ভ্রমণ

বিজয়ন ও মোহনা দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব ভ্রমণের নেশা অনেকেরই আছে তবে সাধের সাথে সাধ্য মেলানো কঠিন। ভ্রমণের অন্যতম অনুসঙ্গ অর্থ, অর্থের যোগান ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ তো দূরের কথা দেশেও ভ্রমণ করা কষ্টকর। তবে ইচ্ছে থাকলে যে যেকোন কাজই করা সম্ভব সেটিই করে দেখিয়েছেন ভারতের এক চা বিক্রেতা। চা বিক্রি করেই স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্বের ২৬টি দেশ ঘুরেছেন তিনি।

ওই চা বিক্রেতার নাম বিজয়ন। ভারতের কোচি শহরের বাসিন্দা তিনি। ১৯৬৩ সালে কোচি শহরের ফুটপাতে চা বিক্রি শুরু করেন। এরপর ব্যবসা ভালো চলায় দোকান খুলে বসেন বিজয়ন। কেরালার গান্ধী নগরের সেলিম রজন রোডে অবস্থিত শ্রী বালাজী কফি হাউজ। বিজয়নের দোকানে কর্মচারী নেই। বিজয়নকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী মোহনা।

বিজয়ন-মোহনা দম্পতি ইতোমধ্যে ২৬টি দেশ ঘুরেছেন। দোকানে বিক্রির টাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ রুপি করে জমিয়ে রাখেন বিদেশ ভ্রমণের জন্য। তবে প্রতিদিনের জমানো ৩০০ রুপি বাইরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় তাই ঘুরতে যাওয়ার জন্য ব্যাংকের দারস্থ হতে হয় তাকে। জমানো টাকা ও ব্যাংক লোনের টাকা দিয়ে ঘুরেছেন সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, আমেরিকা, চায়না, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ২৬টি দেশ। প্রতিবার বিদেশ থেকে ঘুরে আসার পর  চা বিক্রি করেই ব্যাংক লোন পরিশোধ করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

এই চা দোকানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কাপ চা বিক্রি হয়। প্রতিটি কাপের দাম পাঁচ রুপি। গড়ে ১৫০০ রুপি আয় থেকেই ৩০০ রুপি জমিয়ে রাখেন বিদেশ ভ্রমণের জন্য। প্রথমে তারা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতেন। এরপর স্ত্রী মোহনা স্বপ্ন দেখতেন বিদেশ ভ্রমণের। অনেকেই বলতেন ওসব শুধু বড়লোকদের জন্য। এরপর বিজয়ন চেষ্টা করতে থাকেন বাইরে যাওয়ার জন্য। পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে ২০০৮ সালের পর থেকে ঘুরতে শুরু করে নানান দেশ।

বিদেশ ভ্রমণের শুরুটা করেছিলেন ব্যাংক লোন নিয়ে। এরপর এই ভ্রমণ পিপাসু দম্পতিকে নিয়ে পরিচিতজনেরা আলোচনা শুরু করেন। মুখে মুখে তাদের নাম চারপাশে ছড়িয়ে পড়লে তারা বিদেশ ভ্রমণের জন্য স্পন্সর পেতে শুরু করেন। একে একে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া ভ্রমণ করেন স্পন্সরের মাধ্যমে। ২০২১ সালে রাশিয়া ভ্রমণ করার পর পরলোক গমন করেন বিজয়ন। এখন দোকানটির দেখভাল করছেন স্ত্রী মোহনা। বিজয়নের মেয়ে চাকরি করায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে মায়ের।

এক টিভি সাক্ষাৎকারে বিজয়নের স্ত্রী মোহনা বলেন, অনেকেই আমাদের কাছে পরামর্শ চায় কিভাবে ঘুরতে যাবে, আমি তাদের টাকা জমাতে বলি। আমার নেক্সট বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে আছে জাপানে। পরিবারের সবাই মিলে সেখানে ঘুরতে যাব। আমার স্বামী আমায় শিখিয়েছে, স্বপ্ন থেমে থাকে না।

নির্মাতা এম মোহনান চা বিক্রেতা বিজয়ন এবং তার স্ত্রী মোহনাকে নিয়ে ‘অদৃশ্য ডানা’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন যা ২০১৮ সালে নন-ফিকশন শাখায়  ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরার পুরস্কার জিতে নেয়।

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়