ঢাকা     রোববার   ৩০ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৬ ১৪৩১

যেখানে সাঁইর বারামখানা

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ২৮ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৪:২৫, ২৮ জুন ২০২৪
যেখানে সাঁইর বারামখানা

লালন সাঁইয়ের বারামখানা দেখার উদ্দেশ্যে একদিন হাজির হলাম কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার ছেউড়িয়াতে। আখড়ায় ঢুকে প্রথমেই নজরে পড়লো ‘সাঁইজির একতারা’ ভাস্কর্যটি। এর বামেই সাঁইজির বারামখানা বা মাজার। সাঁইজির বারামখানার চারপাশে বেশ কয়েকটি সুদৃশ্য কবর। মাজারে যিনি ছিলেন তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম লালন শাহ’র ভক্ত এবং অনুসারীদের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ এগুলো তাদের কবর।

সাঁইজির কবরের পাশে গিয়ে কিছু সময় বসেছিলাম। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলাম। লালন সাঁইজির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ভাবছিলাম এইখানে সেই মহাপুরুষ শুয়ে আছেন যিনি প্রায় ১১৬ বছর আয়ু পেয়েছিলেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ এক জীবন পেয়েছিলেন। হিন্দুর ঘরে জন্মেছিলেন আর বড় হয়েছিলেন মুসলিমের ঘরে।

লালন সাধনা করেছেন মানুষের। মানুষকে এবং মানবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য যে কথা আমরা এখন বলছি, ধর্ম যার যায় উৎসব সবার— লালন অনেক আগেই বলে গেছেন ‘লালন বলে জাতের কী রূপ, দেখলাম না এই নজরে’। সকল জাত, মত, ধর্ম, পথের উর্দ্ধে মানবিক দর্শন প্রচার করেছেন লালন। লালনের দর্শন ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

লালন মানুষের শরীরকে একটি ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে ঘর শূন্যের ওপর। তিনি মাথাকে তুলনা করেছেন চিলেকোঠার সঙ্গে। যে চিলেকোঠায় স্রষ্টা থাকেন। দেহরূপ এই ঘরের সাড়ে নয়টি দরজা খুঁজে পেয়েছেন লালন। এগুলো হচ্ছে— দুইটি চোখ, নাকের দুইটি ছিদ্র, দুই কান, নাভি, মুত্রনালী এবং পায়ুপথ। এর মধ্যে একটা বন্ধ সেটি হচ্ছে নাভি। 

লালন বলেছেন, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে তার মন, দেহ হচ্ছে মনের দাস— লালনের গানে যে আধ্যাত্ববাদ সেটা অসাধারণ। তার গানের কথা ও সুর লালন পরবর্তী কবি ও সাহিত্যিকদেরও প্রভাবিত করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তার দ্বারা প্রভাবিত। যেমন লালন লিখেছেন— ‘ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর’ আর রবীন্দ্রনাথ লিখেলেন —‘হৃদয়ের একূল ওকূর দুকূল ভেসে যায়’..
এই দুইটি গানের সুরে দারুণ মেলবন্ধন রয়েছে। 

লালন সাঁইয়ের বারামখানা থেকে বের হয়ে দেখলাম একটি বিল্ডিংয়ের মেঝেতে নারী পুরুষেরা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে বসে আছেন।তারা দর্শনীর বিনিয়মে গান শুনিয়ে থাকেন। একটি গ্রুপের কাছে বসে গান শুনলাম। এরপর কিছু দক্ষিণা দিলাম।

ওরসের সময় কী হয়, লালন উৎসবে কী হয়— এসব বিষয় জানার চেষ্টা করলাম। ওখানে একটি জাদুঘর আছে। সেটা দেখলাম। একজন সাধুকে দেখে হতাশ হলাম। তার চেহারা এবং অভিব্যক্তি দেখে নিজেই ভাবছিলাম টাকা দেবো কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলার পরে এই ভালোলাগা উবে গেল। ভারী বুদ্ধি, বিশুদ্ধ ধ্যানের কেউ বলে মনে হলো না। তিনি একটা পর্যায়ে টাকা চেয়ে বসলেন। তারপরে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় নিলাম। ওখানে যেসব নারী পুরুষ থাকেন তারা অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে থাকেন। কেউ বাড়ি বা অন্য কোথাও চলে যান আবার আসেন। তাদের নিজস্ব রীতি পদ্ধতি আছে সেই অনুযায়ী ঘর সংসার করেন। ওখানেই রান্না বান্না করে খান। তাদের জীবনে সব থেকে বড় উৎসব হচ্ছে লালন উৎসব। প্রায় দুই ঘণ্টা ওখানে ছিলাম। তারপর ফেরার সময় হয়ে গেল। ফেরার আগে আরও একবার লালন সাইয়ের মাজারের কাছে গেলাম। তার শান্তি কামনা করে ফিরে এলাম। নিজের অজান্তেই মন গেয়ে উঠলো ‘মিলন হবে কত দিনে…’

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়