ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ 

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৩ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:৪৬, ১৩ জুলাই ২০২৪
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ 

মাতৃভাষার উন্নতি ছাড়া কোনো জাতি কি কখনও বড় হতে পেরেছে? আরব পারস্য জয় করেছিল, কিন্তু পারস্য আরবের ভাষা নেয়নি। শুধু নিয়েছিল তার ধর্মভাব আর কতকগুলো শব্দ। সেদিন অতি কাছে যেদিন বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভাষার স্থান অধিকার করবে। -এ কথাগুলো ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র।

অগ্রণী বাঙালি এই মুসলিম পণ্ডিত ১৯১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মিলন’-এর দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে এ কথাগুলো বলেছিলেন।

এই বহু ভাষাবিদের ৫৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। 

১৯২৫ সালে গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে প্রমাণ করার পর অধ্যয়ন করেছেন জার্মানির ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ১৯২৮ সালে বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদাবলি বিষয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট অর্জন করেছেন। এছাড়া ধ্বনিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমাও লাভ করেছিলেন।

তাকে বহুভাষাবিদ বলার কারণ তিনি ১৮টি ভাষা জানতেন। কেবল জানতেন তাই নয়, অনর্গল কথা বলতে পারতেন। জীবদ্দশায় বাংলা ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাকে বলা হতো ‘চলমান বিশ্বকোষ’। 

এনট্রান্স অর্থাৎ প্রবেশিকা পাসের সময় থেকেই তারর বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে আয়ত্ত করেন আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দিসহ আরও কিছু ভাষা। ১৯১০ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ অনার্স এবং ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য চলে যান ইউরোপে।

প্যারিসের সরোবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে বহু বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে দুরূহ ও জটিল সমস্যার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তিনি পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা (দুই খণ্ড)’ এবং 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ' অন্যতম। তার অন্যতম কালজয়ী সম্পাদনা গ্রন্থ বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। তিনি আলাওলের 'পদ্মাবতী'সহ আরও অনেক গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। শিশু পত্রিকা ‘আঙুর’ তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। 

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ছিল তার অপার। অনুরাগ ছিল জ্ঞানের প্রতি। ১৯৮০ সালে তাকে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মরণোত্তর ‘ডি লিট’ উপাধি দেয়।

ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এ ছাড়াও, তার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের নামকরণ করা হয়।

এই মহাপণ্ডিতের জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে।

/টিপু/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়