ঢাকা     সোমবার   ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৫ ১৪৩১

যেখানে ‘প্যারা’ খেতে যায় মানুষ

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ৪ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ০৮:৫৫, ৪ আগস্ট ২০২৪
যেখানে ‘প্যারা’ খেতে যায় মানুষ

পার্থের দোকানে প্রতিদিন দুই থেকে তিন কেজি প্যারা বিক্রি হয়। ছবি: লেখক

‘প্যারা’ শব্দটির সঙ্গে কম-বেশি সবাই পরিচিত। কোনো কাজ আমাদের ওপর কেউ চাপিয়ে দিলে আমরা প্রায়ই বলে থাকি, ‘আরে ভাই প্যারা দিয়েন না’। কিংবা ইউনিভার্সিটিতে অতিরিক্ত অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়াকেও অনেকেই প্যারা বলে আখ্যা দিয়ে থাকি। কাউকে যদি বলেন ‘প্যারা খাবি?’ সকলেই না বলে বসবেন। তবে এমন এক প্যারা আছে যার স্বাদ নিতে মানুষের ভিড় লেগে যায়।

এই প্যারা আসলে প্যারা সন্দেশ। এর স্বাদ নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে শেরপুর। শেরপুর শহরের রূপকথা সিনেমা হলের পাশেই এই দোকানের অবস্থান। একটি ছোট্ট দোকান। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে স্রেফ চায়ের দোকান। নেই কোনো ব্যানার কিংবা নাম। লোকমুখে এই দোকানের নাম পার্থদার দোকান। প্যারা সন্দেশকে তারা শুধুই প্যারা বলে থাকেন।

এই দোকানের প্যারা সন্দেশ এবং মন্ডার খ্যাতি স্থানীয়দের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। শেরপুর শহরে মন্ডার জন্য আরো কয়েকটি প্রসিদ্ধ দোকান থাকলেও প্যারার জন্য সেরা পার্থদার দোকান। দোকানে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ব্যস্ত সবাই। কেউ বসে অপেক্ষা করছেন চায়ের জন্য, কেউ অর্ডার করছেন প্যারা এবং মন্ডা। 

পার্থদার দোকানের প্যারা সবসময় পাওয়া যায় না। সাধারণত বিকেলের পর বানানো শুরু হয় এবং রাত আটটার আগেই শেষ হয়ে যায়। প্যারা বানাতে দুধ ঘন করে জ্বাল করে নেওয়া হয় এরপর এতে নানা ধরনের উপকরণ যুক্ত করে খামির বানানো হয়। এরপরে হাতে বানানো হয় এই প্যারা। 

এই মিষ্টি বানানো শুরু করেছিলেন পার্থের বাবা অমিত সাহা। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে প্যারা বিক্রি শুরু করেন তারা। সেই থেকেই সুনামের সাথে এখনো ব্যবসা ধরে রেখেছেন। দোকানের চাকচিক্য না থাকলেও খাবারের সুখ্যাতি রয়েছে শেরপুরসহ নানা জেলায়। শেরপুরের মানুষ বাইরে কোথাও আত্মীয়ের বাড়ি গেলে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করেন এই প্যারা। আবার কোনো আত্মীয় শেরপুর বেড়াতে আসলেও পার্থের প্যারা খাওয়াতে নিয়ে আসেন অনেকেই।

পার্থের দোকানে প্রতিদিন দুই থেকে তিন কেজি প্যারা বিক্রি হয়। কেউবা আগেই অর্ডার দিয়ে রাখেন কেউ আবার বুকিং দিয়ে রাখেন। প্রতি কেজি প্যারা সন্দেশের দাম রাখা হয় ৭৫০ টাকা এবং পিস নেওয়া ২০ টাকা। এছাড়াও পাওয়া যায় মন্ডা ও ছানা। পিস হিসেবে এগুলোর দাম ২০ টাকা করে। 

প্রায় ৪০ বছর ধরে পার্থের দোকানে প্যারা বানান রিপন মিয়া। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, একসময় শুধু এলাকার লোক আসলেও এখন বাইরের মানুষেরাও আসেন। আমি এই প্যারা বানানো উস্তাদের কাছে শিখেছি।

ঢাকা থেকে শেরপুর ব্যবসায়িক কাজে আসা আনোয়ার করিম মন্ডা খেতে এসেছেন পার্থের দোকানে। রাইজিংবিডির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শেরপুর প্রায়ই কাজে আসা হয়। একজনের মাধ্যমে জানলাম এখানের প্যারা ও মন্ডা ভালো। তাই খেতে এসেছি। খেয়ে দেখলাম বেশ ভালো এখানকার মিষ্টি।

স্থানীয় বাসিন্দা নাইম আহমেদ বলেন, প্রায়ই আমরা এখানে প্যারা খেতে আসি, আড্ডা দেই। এখানকার প্যারা অনেক ভালো। 

দোকানের স্বত্বাধিকারী পার্থ সাহা বলেন, আমরা প্রায় ৫০-৫৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে আসছি। আমার বাবার পর আমিই দেখভাল করছি। আমাদের প্যারার সুনাম চারপাশেই রয়েছে শুরু থেকেই। কতদিন দোকান করতে পারবো জানি না।

পার্থ জানালেন, প্যারার দোকানটা অন্যের জায়গায় অবস্থিত। এই জায়গার মালিক দোকানটি নাও রাখতে পারেন। হয়তো এখানে উঠে যাবে বড় স্থাপনা। ভাঙা পড়বে দোকানটি!

/লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়