ঢাকা     বুধবার   ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২৯ ১৪৩১

তানজিল আহসানের সফল পথচলা

রাশিদা খাতুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১১, ১৬ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১৫:১০, ১৬ আগস্ট ২০২৪
তানজিল আহসানের সফল পথচলা

সফল উদ্যোক্তা তানজিল আহসান

তানজিল'স কিচেনের স্বত্বাধিকারী তানজিল আহসান। রান্না শিখেছেন মা আর শাশুড়ি মায়ের কাছে। কখনো গল্প করতে করতে আবার কখনো তাদের সহযোগিতা করতে করতে আয়ত্ব করেছেন রান্নার সূক্ষ্ম কলা-কৌশল। তানজিলের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ভালো। তিনি সৃজনশীল এবং আত্মবিশ্বাসী। চলতে চলতেই যে বাধা আসে মানুষ সেই বাধা অতিক্রম করতে করতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে— তানজিল আহসানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একটি করপোরেট অফিসে জব করতেন তানজিল। মাত্র ৪২ দিনের ব্যবধানে বাবা-মাকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিন। ওই অবস্থায় চাকরি করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পরনির্ভরশীলতা মেনে নিতে পারছিলেন না। আবার এমন একটি কাজ খুঁজছিলেন যাতে সন্তানদেরও দেখাশোনা করতে পারেন।

মা আর শাশুড়ি মায়ের কাছে শেখা রান্নার দক্ষতা তার পরবর্তী পেশায় কাজে লেগেছে। রান্না শেখার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করেই এই নারী সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। নিজের স্বদিচ্ছা আর বন্ধুদের পরামর্শে শুরু করেন Tanzil's kitchen এর কাজ। রান্না করা খাবাবের অর্ডার পেতে Tanzil's kitchen নামে তার একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। গ্রাহকদের রিভিউ তার কাজের সুনাম বৃদ্ধিতে সহায়তা দিয়েছে, কাজের পরিধি বৃদ্ধি করেছে।

সময়টা ২০১৬ সাল, তখন ফ্রোজেন ফুডের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। তানজিল শুরুতে শিশুদের টিফিন আইটেম বানানোর কথা চিন্তা করেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। এখন পরিবারকে সময় দিচ্ছেন আবার অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতাও ফিরে পেয়েছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় করেন তানজিল আহসান। তবে যখন তার সন্তানদের পরীক্ষা থাকে তখন কিচেনের কাজ কমিয়ে দেন, রোজার মাসেও কম কাজ করেন বা অর্ডার নেওয়া বন্ধ রাখেন। এই স্বাধীনতা ভালো লাগে তানজিলের।

আরো পড়ুন:

তানজিল আহমেদ বলেন, ‘এমন কিছু করতে চাচ্ছিলাম যাতে সন্তানদের দেখাশোনা করতে পারি আবার আয়ও করতে পারি। বন্ধুদের পরামর্শে নিজে যেটা পারি সেটাকে পুঁজি করেই পথ চলা শুরু Tanzil's kitchen এর। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত করেছি ফ্রোজেন ফুড নিয়ে কাজ করি। ২০১৯ এ আমার ফার্স্ট স্ট্রোক হয়। এরপর কড়াকড়ি করা হলো ঘুমের ওপর। কাজ শুরু করলাম কুকড ফুড নিয়ে। সেই থেকেই আজ অব্দি কাজ চলছে কুকড ফুড নিয়ে। আমার কিচেনের ফুড আইটেমগুলোর মধ্যে বিয়ে বাড়ির শাহী রোস্ট, রঙ্গিলা পোলাও, চাইনিজ ভেজ আর ফলি মাছ বেশি বিক্রি হয়।’

রান্নার একটি সেনসেটিভ উপাদান পেঁয়াজ বেরেস্তা। দেশের অনেকেই তানজিল কিচেনের পেঁয়াজ বেরেস্তা অর্ডার করেন। শুধু তাই না বিদেশে থাকা বাঙালিরা তানজিল কিচেনের পেঁয়াজ বেরেস্তা অর্ডার করেন।

তানজিল আহসান বলেন, পেঁয়াজ বেরেস্তা একটা সেনসেটিভ আইটেম। কাঁচা পেঁয়াজ কেনা থেকে শুরু করে কাটা, ভাজা আর সংরক্ষণ—পুরোটাই চোখে চোখে রাখা লাগে। এক চুল এদিক ওদিক হলেই সর্বনাশ! আমার প্রথমে বেরেস্তার অর্ডার আসে রোজার মধ্যে, তাও ৩.৫ কেজির। অর্ডার নেয়ার পর মাথায় হাত। এত পেঁয়াজ কাটবো কেম্নে। যুদ্ধ শুরু। ৩.৫ থেকে ৪ কেজি কাঁচা পেঁয়াজ কাটলে পাওয়া যায় ১ কেজি বেরেস্তা। সে এক এলাহি কাণ্ড করে অর্ডার প্রসিড করলাম। ওই ক্লাইন্টের রিভিউ এর পর শুরু হলো দেশের বাইরের ক্লাইন্টদের বেরেস্তার অর্ডার। এই বেরেস্তার পেঁয়াজের কাটিং আবার একটু আলাদা। প্যাকিংও স্পেশাল। সেভাবেই করলাম, পাঠালাম আর মন জয় করলাম।’

নিজের কাজে মনোযোগী তানজিল। কাউকে অহেতুক প্রতিযোগী ভেবে মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে চান না তিনি। তবে তারও অস্থিরতা আছে। 

তিনি বলেন,  ‘প্রতিকূল যদি বলি তবে বলবো আমাদের দেশের আনস্টেবল মার্কেট প্রাইস। আজ এক তো কাল আরেক। উর্দ্ধ গতির বাজারে প্রাইস ঠিক রাখা মাঝে মাঝেই নাভিশ্বাস উঠিয়ে দেয়। আরেকটা হলো ডেলেভারি সিস্টেম। কেউ  খাবার ডেলিভারির সাস্টেনেবল একটা সার্ভিস দিতে পারে না। খাবার টা সময় মতো পৌঁছানো নিয়ে যে যুদ্ধ, সেটা নিয়ে লিখলে একটা গ্রন্থ রচনা করা হয়ে যাবে।’

তানজিলের বাড়ি সিলেটে। তবে জন্ম ঢাকায়। পড়ালেখা করেছেন আজিমপুরে অগ্রনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। এরপর বিবিএ, বিবিএ এর পরপর ই জব আর জব করতে করতে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। তানজিলের আরেকটি বোন আছে। পারিবারিকভাবে স্বাধীন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি।

তানজিল বলেন, ‘আমার আব্বু বলতেন, আমরা তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি। সেটা ধরে রাখার দায়িত্ব তোমাদের। আর এই স্বাধীনতাটা ধরে রাখতে যেয়েই নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা তৈরি হয়ে গেছে। তাই কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা না, বরং আমাদের জীবনের চলার প্রনালীটা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে’।

শুরুতে তানজিল আহসান একাই কিচেনের সব কাজ সম্পন্ন করতেন। এরপর তার কাজে যুক্ত হয়েছে আরও তিনজন সহযোগী। তানজিলের স্বপ্ন আরও এগিয়ে যাওয়ার। তানজিল আহসানের এই সাফল্য কেবল একজন উদ্যোক্তার সাফল্য নয়, একজন মায়ের সাফল্যও। 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়