ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

যেসব কারণে অস্ট্রেলিয়াতে জনসংখ্যা বাড়ে না

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৮:৫৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
যেসব কারণে অস্ট্রেলিয়াতে জনসংখ্যা বাড়ে না

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তর দেশ অস্ট্রেলিয়া। এই দেশের মাত্র ৫ ভাগ জায়গায় মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশের থেকে প্রায় ৫২ গুণ বড় দেশের জনসংখ্যা ৩ কোটিরও কম। এর কারণ ইতিহাসের নির্মমতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশটিতের প্রায় ৯৫ ভাগ জায়গা জনবসতিহীন। অস্ট্রেলিয়া দেশজুড়ে সবত্র মানুষের দেখা পাওয়া যায় না। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ বাস করে সমুদ্র উপকূলের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। 

বেশিরভাগ মানুষের বসবাস ব্রেসবন সিটি, সিডনি, মেলবোর্ন এবং এডিলেডের মতো শহরগুলোতে। তার কারণ উপকূল থেকে অস্ট্রেলিয়ার যতটা ভেতরে যাওয়া যাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে যায়। দেশটির ভূভাগে প্রায় ৭০ শতাংশ মরুভূমি। ওই সব অঞ্চলে অস্বাভাবিক গরম। বৃষ্টি বাদল হওয়ার জন্য যে মেঘের প্রয়োজন এই বিরাট অঞ্চলে সৃষ্টি হয় না। সেজন্য বৃষ্টিও হয় না। অস্ট্রেলিয়ার মাঝখানে নদী না থাকায় পানির ভীষণ অভাব রয়েছে। মাটির উর্বরতা নেই। আছে শুধু বালি। 
দেশটিতে মাত্র ৭টি নদী রয়েছে। মারে ডার্লিং এই দেশের সবচেয়ে বড় নদী। কিন্তু এই নদীও তার অববাহিকায় বসবসরত মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খায়। প্রতিবছর বন্যা, খরা, প্রবল ঝড়-তুফান হতেই থাকে।

এই দেশের আদিবাসীরা কৃষ্ণবর্ণের। যারা গুহায়, বনে, জঙ্গলে থাকতো। অস্ত্র-সস্ত্র বানিয়ে বনের পশুপাখি শিকার করতো, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে খেতো। ১৬০৬ সালে ইউরোপিয়ানরা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করে। ১৭৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অস্ট্রেলিয়াকে ধীরে ধীরে তাদের কলোনিতে পরিণত করে। ব্রিটেন থেকে খুনী, চোর, ডাকাত এবং রেপিস্টদের অস্ট্রেলিয়াতের দ্বীপান্তরে পাঠানো হতো।

আরো পড়ুন:

ব্রিটিশ আমলে যেমন আন্দামান দীপপুঞ্জে কয়েদিদের সেলুলার জেলে পাঠানো হতো। ঠিক তেমনি ব্রিটিশরা অস্ট্রেলিতাতেও ব্রিটিশরা তাদের দেশ কয়েদি পাঠাতো। তাদের মাধ্যমে চিকেন পক্স, স্মল পক্স, হুপিং কফের মতো প্রচুর রোগও ছড়ায় অস্ট্রেলিয়াতে। এইসব রোগ অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে ছড়ায়। এইসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় অনেক অ্যাব অরজিনাল। শুধু তাই নয় গবাদি পশুর মতো গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়। অনেক সময় গবাদি পশুর বদলে স্থানীয়দের ব্যবহার করা হতো কৃষিকাজে। অনেককে বাধ্য করা হতো মুক্তা খোঁজার কাজে। রোগে-ভোগে হু হু করে কমতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের সংখ্যা। 

১৮৫১ সালে বদলে যেতে থাকে অস্ট্রেলিয়ার চেহারা। দেশটিতে সোনার খোঁজে বাইরের দেশ থেকে অনেক লোক আসতে শুরু করে। বাড়তে থাকে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা। ১৯০১ সালে ইমিগ্রেশনকে সংরক্ষিত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার চালু করে ‘হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া’ পলিসি। যেখানে শুধুমাত্র ব্রিটিশ এবং সাদা ইউরোপিয়ানদের প্রবেশ করতে দেওয়া হতো। অস্ট্রেলিয়াতে শিল্পবিপ্লব হলেও দূরত্ব এবং প্রতিকূল পরিবেশের জন্য ইউরোপের মানুষ আমেরিকাকে বসবাসে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। সেজন্য অস্ট্রেলিয়াতে জনসংখ্যা সেভাবে কখনো বাড়েনি। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়ার যেসব পুরুষেরা ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী তাদেরকে ব্রিটিশরা বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছিল যুদ্ধের জন্য। এই দুই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন অনেক অস্ট্রেলিয়ান পুরুষ। এইসব কারণে অস্ট্রেলিয়াতে কখনোই জনসংখ্যা খুব একটা বাড়েনি।

লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়