ঢাকা     মঙ্গলবার   ১২ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২৮ ১৪৩১

রতন টাটা যেভাবে টাটা গ্রুপের কর্ণধার হয়েছিলেন

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ১০ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৩:২৮, ১০ অক্টোবর ২০২৪
রতন টাটা যেভাবে টাটা গ্রুপের কর্ণধার হয়েছিলেন

রতন টাটা

ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপের বিশাল সম্রাজ্যের অভিভাবক রতন টাটা। ভারতের প্রভাবশালী এই শিল্পপতির জীবনের শুরুটা ছিল একেবারেই সাধারণ। ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। তার বাবা নাভাল টাটা এবং মা সোনিয়া। শৈশব খুব একটা ভালো কাটেনি রতন টাটার। তার বয়স যখন ১০ বছর তখন তার মা সোনিয়াকে ছেড়ে চলে যান তার বাবা নাভাল টাটা। জিমি এবং রতন দুই ভাইকে রেখে সুইস ভারতীয় সিমোন টাটাকে বিয়ে করেন তার বাবা। পরবর্তীতে ছোট্ট রতন এবং তার মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন তার দাদি। 

তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর তিনি ভর্তি হয় ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন ক্যাথেড্রাল স্কুলে। সেখান থেকেই মাধ্যমিক শেষ করেন। ১৯৫৫ সালে নিউইয়র্কের রিভার্ডেল কান্ট্রি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে নিউ ইয়র্কের কর্ণেল ইউনির্ভাসিটি থেকে আর্কিটেকচার অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। 

পরবর্তীতে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমেরিকার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করেন। টাটা গ্রুপে কাজ শুরু করেন ১৯৬১ সালে। টাটা গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন নেলকোকে একক প্রচেষ্ঠায় একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যান তিনি। ফলে ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে বসান টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান জেআরডি টাটা। 

ব্যবসায়ী মহলে শুরু হয়ে যায় তুমুল সমালোচনা। শুরুতে তিনি চরম বিরোধিতার মুখে পড়েন। অনেক সিনিয়র কর্মী স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন। রতন টাটা এই সমস্যা মোকাবিলায় চাকরির বয়সসীমা বেধে দেন। যাতে করে সিনিয়র কর্মীদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যায়। মূল প্রতিষ্ঠানের বিশ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে তিনি টাটা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় করেন এবং প্রভাব বাড়ান। প্রতিটি কোম্পানিকে লাভের এক অংশ টাটা গ্রুপে বিনিয়োগ করার নির্দেশ দিলেন, যাতে মূল কোম্পানি বড় করা যায়। বিশেষ করে লবণ এবং সফটওয়্যার ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যান। রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপের আয় ২১ বছরে ৪০ গুণ বেড়ে যায়। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ৫০ শতাংশ হারে লাভ করতে থাকে। টাটা মটরস-এর গাড়ি সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা পায়। ভারতের সবচেয়ে বড় আউট সোর্সিং ফার্ম টাটা গ্রুপের। এ ছাড়া দেশটির শেয়ার বাজারের প্রায় সাত শতাংশ এই কোম্পানির দখলে। টাটাকে আন্তর্জাতিক জায়ান্ট কোম্পানিতে পরিণত করেন রতন টাটা। সাতটি ব্যাবসায়িক খাতে গ্রুপটির রয়েছে একশোটি প্রতিষ্ঠান।

আইটি, ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক্স, কেমিকেল, খাদ্য, টেক্সটাইলসহ সব ক্ষেত্রেই টাটা গ্রুপের যে স্বদর্প বিচরণ তার নির্দশক এবং পথ প্রদর্শক রতন টাটা। বিশ্বব্যাপী এই প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। বিদেশে ভারতের হোটের ব্যবসা সম্প্রসারণে রতন টাটার রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। রতন টাটা ১৯৯০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৬-১৭ সালের দিকে কিছুদিন টাটা গ্রুপের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি টাটা ট্রাস্টের দায়িত্বপালন করেছেন। তার বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি ঘটল ৮৬–তে এসে। ভারতের এই শীর্ষ ব্যবসায়ী সোমবার অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন মুম্বাইয়ের ক্যান্ডি হাসপাতলে। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়