পুরান ঢাকার রহিম বিরিয়ানি
রহিম বিরিয়ানি। ছবি: লেখক
ঢাকাই বিরিয়ানির সুনাম সারাদেশেই আছে। তবে পুরান ঢাকার বিরিয়ানি একটু বেশিই স্পেশাল। পুরান ঢাকায় দোকান ভেদে বিরিয়ানিতে বিশেষত্ব যোগ হয়। যেমন রহিম বিরিয়ানিতে দেওয়া হয় ফলের রস, বাদাম আর দুধ। যা বিরিয়ানির স্বাদে মৌলিকত্ব দিয়েছে।
সম্প্রতি পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে গিয়েছিলাম। খেয়ে এলাম রহিম বিরিয়ানি। স্বাদে, গন্ধে ভরপুর এই বিরিয়ানি দিনের যেকোন সময় পাওয়া যায় না। এই বিরিয়ানি খেতে চাইলে আপনাকে যেতে সকাল ৬ টা থেকে ৯ টার মধ্যে। দোকানটির অবস্থান সূত্রাপুর থানার পাশেই। ১/১৪ ওয়াল্টার রোডের পাশে একটি সাইনবোর্ড বিহীন দোকানে বিক্রি হয় রহিম বিরিয়ানি। সকালে যে কেউ এই রাস্তা দিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ভোজনরসিকদের জটলা।
বর্তমানে দোকানটির দেখভাল করছেন আব্দুল কাদের মিয়া। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে যাত্রা শুরু হয় এই দোকানের। তবে মাঝখানে ৫ বছরের মতো বন্ধ ছিলো দোকানটি। এই বিরিয়ানির দোকান সবার প্রথম শুরু করেন কালু মিয়া। কালু মিয়াকে সবসময় কাজে সাহায্য করতেন তারই ভাতিজা আব্দুর রহিম। আব্দুর রহিম এখনও বেঁচে আছেন তার বয়স ৮২ বছর। সেই রহিমের ছেলে আব্দুল কাদের এখন এই দোকান দেখভাল করেন।
এই বিরিয়ানির বিশেষত্ব হচ্ছে এই বিরিয়ানি দেখতে একেবারেই সাদা এবং এতে যোগ করা হয় আঙুর ও বেদনার রস। এছাড়াও দেওয়া হয় বাদাম ও মালাই। স্বাদে মৌলিকত্ব আনতে কোনো অতিরিক্ত মশলা দেওয়া হয় না। মাটির চুলায় এই খাবার রান্না করেন আব্দুল কাদের নিজেই। সহায়তা করেন দুই ভাই জামিল ও এলাহী। প্রতিদিন বিক্রি হয় ৬০ কেজি মতো বিরিয়ানি। বসার জায়গা রয়েছে প্রায় ২০ জনের মতো। অনেকেই পার্সেল নিয়ে যায়।
প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম রাখা হয় ৩০০ টাকা। হাফ বিরয়ানির দাম ১৫০ টাকা। ১৫০ টাকার প্লেটে এক পিস খাসির মাংস থাকে, ৩০০ টাকার প্লেটে থাকে দুই পিস খাসির মাংস। খাবারের সঙ্গে দেওয়া হয় লেবু, মরিচ ও পেঁয়াজ। শীতকালে এর সঙ্গে দেওয়া হয় টমোটের এক ধরনের ব্যতিক্রমী টক। চাইলে আলাদা রাইস নিতে পারবেন ৫০ কিংবা ১০০ টাকা মূল্যের।
এখানকার গ্রাহকদের মত, রহিম বিরিয়ানি সকালে খাওয়ার জন্য একেবারেই পারফেক্ট।
আব্দুল কাদের বলেন, আব্বার কাছে জেনেছি তিনি দুই আনায় বিক্রি করতেন এক প্লেট রহিম বিরিয়ানি। তার আগে দাদা এই ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
ফলের রস কেন বিরিয়ানিতে ব্যবহার করা হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত স্বাদ ও ঘ্রাণ নিয়ে আসতেই এই বিরিয়ানিতে ফলের রস দেওয়া হয়। অন্যদের চেয়ে আমাদের বিরিয়ানি এখানেই ব্যক্তিক্রম। কোনো ধরনের খোলা মশলা ব্যবহার করা হয় না। কোন ধরনের আলাদা ঘ্রাণ বা কৃত্রিম রং ব্যবহার করিনা আমরা।
প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই এই বিরিয়ানি খেতে আসেন। তবে স্থানীয় লোকদের সংখ্যাই অধিক। শীতকালে এই বিরিয়ানির চাহিদা বেশি থাকে।
রাইজিংবিডির সাথে কথা হয় সূত্রাপুরের স্থানীয় ব্যক্তি সঞ্জয়ের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার এইডা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খাবার। নাস্তায় পরোটা ভাজির চেয়ে এই খাবার খাওয়া বেশি ভালো। অতিরিক্ত কোন মশলা নেই, খেলে শারীরিক কোনো সমস্যা হয় না।’
মিরপুর থেকে এই বিরিয়ানি খেতে আসা সিয়াম বলেন, বন্ধুরা মিলে আজ এসেছি। একদিন এসে পাইনি। খেয়ে দেখলাম, বেশ ভালো। তেল মশলা কম। এই প্রথম জীবনে নাস্তা হিসেবে বিরিয়ানি খেলাম। এই বিরিয়ানির ঘ্রাণ অসাধারণ। যা আগে কোনো বিরিয়ানিতে পাইনি।
ঢাকা/লিপি