ক্রুজ জাহাজ কেন ব্যয়বহুল, কী কী থাকে জাহাজের ভেতরে
বিশ্বে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ক্রুজ জাহাজ রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাহাজটি ১৮ তলা বিল্ডিং এর চেয়েও বড়। এটি প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্যের সমান। একসঙ্গে ৯ হাজারের বেশি যাত্রী একইসঙ্গে এই জাহাজে চড়তে পারে। জাহাজটির দাম ১.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যার আয়তন আপনি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। তবে অনুমান করতে পারেন সমুদ্রে ভাসমান শহর। খুব কম মানুষই জানে বিশাল এসব জাহাজ কীভাবে তৈরি করা হয়, মহাসমুদ্রে এটি কীভাবে চলে এবং এর মধ্যে কী কী হয়। জানলে চমকে উঠবেন যে এই জাহাজে একক ভ্রমণে কত টাকা লাগে।
ক্রুজ জাহাজে ওয়াটার পার্ক থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ সহ অবিশ্বাস্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিশ্বে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ক্রুজ জাহাজ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম ওয়ান্ডার অফ দি সি। এর দৈর্ঘ্য ১১৮৭ ফুট এবং এটি ৬৯৮৮ জন যাত্রীকে একত্রে জায়গা দিতে পারে। আইকন অফ দি সি নামে একটি ক্রুজ জাহাজ এখনো যাত্রা শুরু করেনি তবে এর উচ্চতা হবে ১১৯৮ ফুট এটি প্রায় ১০ হাজার জন যাত্রীকে জায়গা দিতে পারবে।
আল্লুর অফ দি সিস-এর অংশবিশেষ। ছবি: সংগৃহীত
আল্লুর অফ দি সিস নামে ১১৮৭ ফুট লম্বা ক্রুজ জাহাজ যখন ২০০৯ সালে চালু হয় তখন এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল। যার নির্মাণ প্রকল্পে ১.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। এই ক্রুজ জাহাজটিতে ডেক ডান্স হল, আইস স্কেটিং রিং, ২৫ টি ডাইনিং ও ১৩০৮ টি বসার কক্ষ ছিলো, একটি থিয়েটার হল ছিল। এতসব সুবিধার জন্যই এই ধরনের জাহাজে ভ্রমণে অবিশ্বাস্য রকমের খরচ হয়ে থাকে। জাহাজের সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভর করে একটি ভ্রমণ টিকিটের মূল্য ২৫ হাজার ডলার থেকে ১ মিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্রুজ জাহাজ হল 7c এক্সপ্লোরার। যার টিকেট মূল্য প্রায় এক দশমিক তিন মিলিয়ন ডলার। যে টিকিটের মাধ্যমে আপনি ১২৩ দিনে ১১ টি দেশের ৪১ টি পোর্ট ভ্রমণ করতে পারবেন। এই যাত্রায় সিডনি, টোকিও, হংকং এর মত শহরে পাঁচটি বিলাসবহুল হোটেলে থাকার পাশাপাশি শহরে ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। যদিও ওই টিকেটের খরচ সবসময় এক থাকে না। কখনো কখনো পরিবর্তন হয়ে থাকে।
যেসব ক্রুজ জাহাজ তৈরি হয়েছে তার মধ্যে আইকন অব দ্য সিস অন্যতম। নামের মত জাহাজটি অত্যাধুনিক বৃহৎ ও আইকনিক। এটি রয়েল ক্যারিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ধারা নির্মিত সর্বশেষ জাহাজ। জাহাজটি প্রায় ১২০০ ফুট লম্বা এবং পাঁচ হাজার দুইশ অতিথিসহ ২৩৫০ জন ক্রু সদস্যকে জায়গা দিতে পারবে। জাহাজের প্রত্যেকটি ডেকে রয়েছে অসাধারণ সুযোগ সুবিধা। আধুনিক পুল, থিয়েটার সহ বিশাল জানালা রয়েছে। এ জাহাজের প্রতিদিনকার ভ্রমণ হলো এক হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অন্যতম একটি ক্রুজ হলো, রয়েল ম্যান হারমনি অফ দ্য সিস জাহাজটি ৫৪৭৯ জন অতিথিকে একসাথে বহন করতে পারে। পৃথিবীতে যত ব্যয়বহুল ক্রুজ জাহাজ নির্মাণ হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এটি ১১৮৭ ফুট দুর্গের যে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতার চেয়ে ১৬৪ ফুট লম্বা। এখানে রয়েছে মিউজিক্যাল আসরসহ একটি থিয়েটার ও রোবট দ্বারা পরিবেশিত বার।
সমুদ্রের অন্যতম ক্রুজ জাহাজ ওয়েসিস অফ দা নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল ১. ৪ বিলিয়ন ডলার। ১১৮১ ফুট দৈর্ঘ্যের জাহাজটির
বিলাসবহুল রুমের মূল্য হয়ে থাকে প্রায় ১৬ হাজার ডলার। এসব জাহাজের দাম বেশি হওয়ার কারণ হলো এখানে সময় কাটালে আপনি প্রাকৃতিক বিভিন্ন জিনিস দেখতে পারবেন এবং সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। এসব বিলাসবহুল জাহাজ যারা পরিচালনা করে থাকে তারা অনেক কষ্ট করে থাকেন। একই জাহাজের সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে থাকে ক্রুরা। যাত্রীদের ভ্রমণ আরামদায়ক হলেও ক্রুদের ভ্রমণ কখনো আরামদায়ক হয় না কারণ তাদের শোবার ঘর থাকে সংকুচিত। এসব ক্রুজ সদস্যদের দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা সপ্তাহে সাত দিন জাহাজে কাজ করতে হয়।
যেহেতু এসব জাহাজ বিভিন্ন ভেন্যু থেকে লোক তুলে থাকে। তাই তাদের খাবার, ওয়েলকাম ড্রিংকসহ বিভিন্ন কাজের জন্য লোক প্রয়োজন হয়। জাহাজ যাত্রা করার আগে ক্রুদের বিশেষভাবে সবকিছু দেখে নিতে হয়। পর্যাপ্ত খাবার এবং জিনিসপত্র নিয়ে ক্রুদের যাত্রা শুরু করতে হয়। যদি মাঝপথে কখনো ক্রুজ জাহাজের খাবার শেষ হয়ে যায় তখন ক্রুরা অন্য জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং অন্য জাহাজ খাবার পৌঁছে দেয়।
গত ১০০ বছরেও ২২টি ক্রুজ জাহাজ দুর্ঘটনা শিকার হয়েছে। বর্তমানে ক্রুজ জাহাজগুলোতো অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। এই ক্রুজ জাহাজগুলোতে মর্গও রয়েছে। ভ্রমণকালে যদি কেউ মারা যায় তাহলে তাকে মর্গে রাখা হয়।এরপর জাহাজের পক্ষ থেকে কী কারণে মৃত্যু হয়েছে সে জন্য ডেথ সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়। মৃতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য রাখা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্রু। কখনো কখনো কোন ক্রুজ জাহাজের মৃতের শেষকৃত্য সম্পাদন করার জন্য রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থা। ক্রুজ জাহাজে যেসব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে তার অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। ক্রুজ জাহাজের এসব কর্মীদেরকে কয়েক মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হয় নিরাপদে জাহাজ পরিচালনার জন্য।
ঢাকা/লিপি