ঢাকা     বুধবার   ২৬ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১৩ ১৪৩১

জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান

মুফতি আতাউর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ২৪ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ১৫:৪২, ২৪ মার্চ ২০২৫
জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান

জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম ফরজ বিধান এবং ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম আর্থিক উৎস। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে জাকাতের ভূমিকা বহুমুখী। এটি শুধু আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাকাত এমন একটি বিধান যা পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মেও ছিল। যেমন ঈসা (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৩১)

কোরআন ও হাদিসে জাকাত 

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ পাশাপাশি আনা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো এবং জাকাত দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৩)

আরো পড়ুন:

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। সদকা তথা জাকাত হচ্ছে দলিল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪২২)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে জাকাত দেয়, তার সম্পদ ক্ষয় হয় না, বরং তা বৃদ্ধি পায়।’ (সহিহ মুসলিম)

যাদের ওপর জাকাত ফরজ

ইসলামী শরিয়ত কেবল সামর্থবান মানুষের ওপর জাকাত ফরজ করেছে। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্তারোপ করেছে। তা হলো :

মুসলিম হওয়া : জাকাত শুধু মুসলমানের ওপর ফরজ। 
স্বাধীন হওয়া : দাস বা পরাধীন ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ নয়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া : নিসাব হলো শরীয়ত নির্ধারিত সম্পদের সর্বনিম্ন পরিমাণ। যারা পূর্ণ বছর এই পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবে কেবল তারাই জাকাত দেবে।
সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকা : কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, সাধারণত এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত আদায় করতে হয়।
ঋণমুক্ত হওয়া : ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হয়। (দুররুল মুখতার : ৩/১৮২; হিদায়া, জাকাত অধ্যায়)

জাকাতের নিসাব

নিসাব হলো সম্পদের সর্বনিম্ন পরিমাণ, যার ওপর জাকাত ফরজ হয়। কারো কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ (৮৭.৪৮ গ্রাম) এবং সাড়ে ৫২ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা থাকে তাহলে তাকে জাকাত দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বর্ণের হিসাব তখনই প্রযোজ্য হবে যখন স্বর্ণ ছাড়া রূপা, নগদ অর্থ অথবা অন্য কোনো সম্পদ থাকবে না। যদি স্বর্ণের সঙ্গে রূপা বা নগদ অর্থ থাকে তবে সে ক্ষেত্রে রূপার হিসাবে জাকাত প্রদান করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৮০; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮০)

জাকাত কখন দিতে হবে

জাকাত বছরের যে কোনো সময় দেওয়া যায়। তবে রমজান মাসে যেহেতু আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন তাই আলেমরা রমজানে জাকাত দেওয়া উত্তম বলেন। আশা করা যায়, কেউ রমজানে জাকাত দিলে আল্লাহ কমপক্ষে ৭০টি ফরজ দানের সাওয়াব দেবেন। এছাড়াও রমজান থেকে রমজান হিসাব রাখাও ব্যক্তির জন্য সহজ হবে।

আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে জাকাত প্রদানের তাওফিক দিন। আমিন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়