ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুমেক হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে সিটি স্ক্যানার নষ্ট

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১০ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুমেক হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে সিটি স্ক্যানার নষ্ট

হাসপাতাল ভবন

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন পাঁচ মাস ধরে নষ্ট।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠিয়ে কমিশন বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে সরকারি এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সিটি স্ক্যানারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি একটিমাত্র পরীক্ষার জন্যই রোগীদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ অর্থ।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু মেশিন নষ্টের পত্র দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। এ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিমেন্স কোম্পানির সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয়। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়। যা ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রায় পাঁচ মাস এ হাসপাতালে সব ধরনের সিটি স্ক্যানার বন্ধ রয়েছে।

এদিকে হাসপাতালে আসা রোগীদের সিটি স্ক্যানের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে একদিকে রোগীদের ২-৩ গুণ অর্থ বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে, অপরদিকে চিকিৎসকরাও সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রোগীদের।


নগরীর গিলাতলা এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধ মো. ইলিয়াস মিয়ার ব্যাংকার ছেলে আশরাফ-উল-আলম অভিযোগ করেন, তার বাবাকে ৯ মে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। ওই দিন রাতেই মেডিক্যাল অফিসার ডা. সিদ্ধার্থ বাওয়ালী রক্তের তিনটি পরীক্ষা করাতে দিয়ে বলেন, লোক এসে রক্ত নিয়ে যাবে। রাতে জনৈক ব্যক্তি রক্ত নিয়ে হাসপাতালের বাইরে যেতে চাইলে তিনি এর কারণ জানতে চান। তখন ওই ব্যক্তি জানান, তিনি হাসপাতালের সামনের খুলনা হেলথ গার্ডেন নামক প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন। রক্ত পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ৭০০ টাকা বিল করা হয়।

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে ডা. সিদ্ধার্থ বাওয়ালী আবারো তার বাবাকে সিটি স্ক্যান করতে মহানগর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বলেন। তখন তিনি জানতে চাইলে বলা হয়, হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট। এভাবেই তিনিসহ প্রতিদিন অসংখ্য রোগী হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খুমেক হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করাতে সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। কিন্তু বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এটি করাতে হলে সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। আর সরকারি হাসপাতালের মেশিন নষ্টের অজুহাতে চিকিৎসকরা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে কমিশন বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ নগরীর গোয়ালখালি এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ডিএম রেজা সোহাগের। তিনি মেশিন নষ্টের প্রকৃত কারণ এবং মেরামতে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান।

হাসপাতালের ল্যাব বিভাগের ইনচার্জ এসএম আলতাফ হোসেন জানান, সিটি স্ক্যান মেশিনের পাওয়ার কন্ট্রোল নষ্ট হয়ে গেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বাংলাদেশ’র টেকনিশিয়ানরা এটি মেরামতের জন্য ৪৮ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দিয়েছে। তবে বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেইনেন্স অ্যান্ড পিসি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর জার্মান থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করা হবে। এতে সপ্তাহখানেক সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনন্দ মোহন সাহা রাইজিংবিডিকে বলেন, সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্টের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এর টেন্ডারও হয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি এটি ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। 




রাইজিংবিডি/খুলনা/১০ মে ২০১৬/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ