ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জ্বরের রোগীকে চিকিৎসা না দেওয়া ও লাশ আটকে রাখার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ১৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জ্বরের রোগীকে চিকিৎসা না দেওয়া ও লাশ আটকে রাখার অভিযোগ

রাজধানীতে জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর পর দুই দিন লাশ হাসপাতালে আটকে রাখারও অভিযোগ করেছেন মৃতের স্বজনরা।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. তপন বাগচী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, তার ভাইপো তুষার বাগচী (৪৫) ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। করোনা পরীক্ষার জন্য তার লাশ দুই দিন হাসপাতালে আটকে রাখা হয়। পরীক্ষায় ফলাফলে ‘করোনা নেগেটিভ’ আসায় ১২ এপ্রিল বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

ড. তপন বাগচী জানান, তুষারের জ্বর হয়েছিল। হটলাইনে কল করে পরামর্শ নিয়ে বাসাতেই চিকিৎসা চলছিল। জ্বর না কমায় বাসার পাশে শমরিতা হাসপাতালে যান তুষার। জ্বরের রোগী বলে তারা চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিতে চাইলে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। হটলাইনে কল করে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তুষারকে। সেখানে নানা টালবাহানা শেষে ভর্তি নেন তারা। তবে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তুষারের স্ত্রী ও বোনকে রোগীর সঙ্গে যেতে দেয়নি। ১৫ মিনিট পরে জানানো হয়, রোগী মারা গেছে। পরে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। দুই দিন পরে রিপোর্টে বলা হয়, তার শরীরে করোনা ছিল না। পরে মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনা না থাকাটা সুখবর, উল্লেখ করে তপন বাগচী ফেসবুকে লেখেন, ‘সুখবর বটে! কিন্তু আমার ভাইপোকে কি আর ফেরৎ পাবো? সাধারণ জ্বরেই সে মারা গেল! ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তাঁকে বাঁচাতে পারল না! কার কাছে অভিযোগ করব? এই যে আমার ভাইপো জ্বরের চিকিৎসা পেল না, এর দায় কে নেবে?’

তুষারের পিসতুতো বোন শিখা বিশ্বাস ফেসবুকে লেখেন, ‘তার শুধু জ্বর ছিল। জ্বর ৯৯/১০০/১০১/১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত ছিল। এর উপরে কোনোদিন জ্বর ওঠেনি। যদি ওষুধ খেত বা সাপোজিটর দিত, জ্বর নেমে যেত। আবার জ্বর আসতো। গলাব্যথা ছিল না। সর্দি-কাশি ছিল না। বুকে ব্যথা বা কোন জাতীয় ব্যথা-বেদনা ছিল না। শ্বাসকষ্ট ছিল না।

সমরিতায় নেওয়ার পর অনেক অনুরোধ করা হলেও সেখানকার দায়িত্বরতরা একটু দেখেও নি। স্যালাইন দিতে অনুরোধ করা হলে, তাও দেয়নি। তারা জানিয়েছে, তারা জ্বরের রোগী নেয় না।

ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে তাদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা চাইলেও তারা তা দেয়নি। পরে অন্যভাবে অনেক পরে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গেল। এরপর নেওয়া হয় ঢামেকে।

অ্যাম্বুলেন্সে আরেক বিপত্তি। অক্সিজেন লাগাতে অনুরোধ করলেও তারা দেয়নি।

ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে তো কত কাহিনি করা লাগলো। আগে এখানে যান, ওখানে যান, এটা করেন, ওটা করেন, এই করতে করতে অনেক সময় কেটে গেল। এরপর এমারজেন্সি বিভাগে নিল। সে সময়ও আমার ভাই কথা বলছেন। সেখান থেকে এ রুম সে রুম করে আরো তিন রুমে নেওয়া হলো। ১০/১৫ মিনিট পরে একজন এসে আমার জানালেন রুগী মারা গেছে।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ঢামেক হাসপাতালের পরিচালককে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ‘কথা বলতে পারব না, দুঃখিত’ বলে ফোন রেখে দেন। পরে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. আমিনুল হাসানকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব।’

পরে আরেকবার ফোন করা হলে আমিনুল হাসান বলেন, ‘মৃতদেহ হাসপাতালে আটকে রাখা বা চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না।’


ঢাকা/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়