ডেঙ্গু হলে করণীয়
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী (ফাইল ফটো)
ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও অনেকেই জানেন না, জ্বর শুরু হওয়ার ঠিক কতদিন পর কোন কোন টেস্ট করা জরুরি। এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন জ্ঞান সেই। পরিবারের কোনো সদস্য যাতে অকালমৃত্যুর দিকে এগিয়ে না যায়, সেজন্য ডেঙ্গু জ্বর এবং এর পরীক্ষা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য সবার জানা থাকা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার মাধ্যমে এ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের শরীরে জটিলতা বেশি দেখা দেয়।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার সাহা জানান, ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হয়। ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক। বেশি তীব্র হলে সেটাকে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ বলে। সাধারণত, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়—
• প্রচণ্ড জ্বর। সেই সঙ্গে হাড় ও শরীর ব্যথা হতে পারে।
• শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। সেই সঙ্গে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে আবার জ্বর আসতে পারে।
• মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে।
• জ্বর হওয়ার ৪-৫ দিন পরে শরীরে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
• বার বার গলা শুকানো এবং অত্যাধিক পিপাসা লাগতে পারে।
• খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা এবং মাঝে মাঝে খিঁচুনিও হতে পারে।
• অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং মাঝে মাঝে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
• শরীরে পানি আসার কারণে অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে।
• অনেক রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কারো কারো বুকে ও পেটে পানি আসে, যকৃত আক্রান্ত হয়। আবার রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
জ্বর হওয়ার কতদিনের মধ্যে এবং কোন টেস্ট করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে, জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, স্বাভাবিক জ্বর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের পার্থক্য বোঝার জন্য চিকিৎসকরা শুধু শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠা লক্ষণগুলোতেই নজর দেন না। কারণ, অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হয় না। তাই, ডেঙ্গু নির্ণয়ে কিছু টেস্ট করানো জরুরি। যেমন: ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হলো এনএসওয়ান (NS1)। এই টেস্ট জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই করলে টেস্টের রেজাল্ট ভুল আসে। তাই, এনএসওয়ান টেস্টের রিপোর্ট শতভাগ নির্ভুল পাওয়ার জন্য জ্বর হওয়ার ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে এ টেস্ট করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ডেঙ্গু জ্বর চার দিন পেরিয়ে গেলে এনএসওয়ান টেস্ট করা যাবে না। কারণ, জ্বরের চার দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এনএসওয়ান টেস্ট করলে তার রিপোর্ট ভুল আসে।
কারো ডেঙ্গু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে জ্বরের ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে করতে হবে আইজিজি ও আইজিএম। এ দুই টেস্টের মধ্যে রোগী আইজিজি টেস্ট না করলেও চলবে। তবে, আইজিএম টেস্ট অবশ্যই করতে হবে। আইজিএম টেস্টেই ধরা পড়ে রোগীর ডেঙ্গু জ্বর।
তবে, টেস্টে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলেও উদ্বিগ্ন না হয়ে চিকিৎসা শুরু করার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, এ সময় রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল খাবার ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল অথবা নাপা খেতে দিন। ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে গেলেও সেটা ভয়ের কারণ নয়। খেয়াল রাখতে হবে, রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামে কি না? এর নিচে নেমে গেলে এবং সেই সঙ্গে রক্তপাত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি তার সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এমএ/রফিক