ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

দেশে প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে ‘এসএমএ ক্লিনিক’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৪, ২ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৮:৩৮, ২ জুলাই ২০২৪
দেশে প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে ‘এসএমএ ক্লিনিক’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) রোগীদের নিয়ে সফলভাবে ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি এসএমএ ক্লিনিক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসএমএ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ বিনামেূল্যে এ ক্লিনিকের আয়োজন করা হয়।

দেশে এসএমএ রোগীদের কল্যাণে কাজ করা একমাত্র সংগঠন ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপাী এ আয়োজন করা হয়। এতে সহযোগিতা করে বারাকাহ জেনারেল হাসপাতাল। রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত হাসপাতালটির শাখায় এ ক্লিনিক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ২০ জন এসএমএ রোগী সেবা নেন। ক্লিনিকে চিকিসৎদের পরামর্শের পাশাপাশি থেরাপি, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ডিভাইসের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।

মাল্টিডিসিপ্লিনারি এসএমএ ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—রেসপিরেটরি মেডিসিনের প্রফেসর ডা. এ আর এম লুৎফুল কবীর, পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক্সে প্রফেসর ডা. সারওয়ার ইবনে সালাম রোমেল, পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. দীপা সাহা, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুদীপ্তা সাহা, সিনিয়র ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এসএম ফারহান বিন হোসাইন, পুষ্টিবিদ নাঈমা রুবি, ফিজিওথেরাপিস্ট মো. মাসুম এবং প্রসথেটিস্ট অ্যান্ড অর্থোটিস্ট নির্মল কান্তি দেব রায়। 

স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া দেশের সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু, বিরল রোগ হিসেবে দেশে এখনো এসএমএ’র পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় দেশে প্রথমবারের মতো এসএমএ ক্লিনিক আয়োজনকে সংগঠনের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখছেন কিউর এসএমএ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। তারা বলছেন, এই আয়োজন এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সংগঠনটি ইতোমধ্যে এসএমএ সচেতনতায় সেমিনার, ভার্চুয়াল পরামর্শ সভা, র‍্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

এসএমএ দুরারোগ্য রোগ। পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরোন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ। এর ওষুধ বাজারে এলেও তা সাধারণের কেনা সাধ্যাতীত। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তবে, সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে, চিকিৎসার অভাবেই দেশে অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।

এসএমএ লক্ষণগুলো বিকাশের আগে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে পরবর্তীতে চিকিৎসায় ভালো ফল পেতে তা সহায়ক হয়। একটি নবজাতকের স্ক্রিনিংয়ের সাহায্যে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি থেরাপিসহ আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে একজন আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় এমনিওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে অনাগত শিশুটি এসএমএ আক্রান্ত কি না, তা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তাই, সচেতনতাই পারে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

এসএমএ রোগটি বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যার কারণে হয়। যদি কোনো দম্পতি এসএমএ ক্যারিয়ার হয় বা এসএমএ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী জিন বহনকারী হয়, তাদের বাচ্চার ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে এসএমএ রোগ হওয়ার। ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার এবং ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে সুস্থ বাচ্চা হলেও এসএমএ ক্যারিয়ার হওয়ার।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত এসএমএ রোগী ১৬৫ জন। দেশের কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মাসিউটিক্যালের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে সংগঠনটি এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। 

অনুষ্ঠানে কিউর এসএমএ বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো:
১. দেশে এসএমএ রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। 
২. সব সরকারি হাসপাতালে এসএমএ ডেডিকেটেড কর্ণার বা এসএমএ কর্নার স্থাপন করা। 
৩. দেশে এসএমএ রোগের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য জাতীয়ভাবে জরিপ করা। 
৪. অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে এসএমএ রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা। 
৫. এসএমএ রোগ সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ। 
৬. এসএমএ রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধকে ‘অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত’ করা। 
৭. আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা। 

হাসান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়