ভারতে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদক নিচ্ছেন না স্বর্ণজয়ীরা
ভারতে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশটির পুদুচ্চেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণজয়ী দুই কৃতী ছাত্রী রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদক গ্রহণ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মেধাবী শিক্ষার্থী কার্তিকা বি কুরুপ নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে সমাবর্তনে না থাকার ঘোষণা দিয়ে ফেইসবুক পোস্টে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে তিনি পদক নেবেন না, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়াবেনও না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ বিভাগের ছাত্রী কার্তিকা, একই বিভাগের রাবিহা আব্দুরেহিম নামের আরেক ছাত্রীও তার স্বর্ণপদক নেননি। তিনি অবশ্য রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে ঢুকতে না পেরে স্বর্ণপদক বর্জন করেছেন।
নাগরিকত্ব বিল ও এনআরসি‘র বিপক্ষে আন্দোলনে অংশ নেয়ার জেরে স্বর্ণপদক জয়ী এই মেধাবী ছাত্রীকে তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে ঢুকতে না দেয়ার খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।
গাল্ফ নিউজসহ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, পণ্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের উপস্থিতিতে সমাবর্তনে ঢুকতে না দেয়ায় রাষ্ট্রপতি চলে যাওয়ার পর তা দিতে চাইলেও রাবিহা আব্দুরেহিম নামের ওই ছাত্রী তা নেননি।
সোমবারের ওই ঘটনা সম্পর্কে রাবিহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যখন আসেন, সেসময় আমি মিলনায়তনে ঢোকামাত্রই নিরাপত্তা রক্ষীরা বের হয়ে যেতে বলেন। এটা নাগরিকত্ব বিলের বিপক্ষে আমার অবস্থানের কারণে হতে পারে, এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আমি অংশ নিয়েছি বলে। ‘
রাষ্ট্রপতি চলে যাওয়ার পর তাকে ঢুকতে দেয়া হয়, মঞ্চে ডাকা হয়। সেখানে তার সনদ নিলেও স্বর্ণপদক না নিয়ে চলে আসেন তিনি। এ বিষয়ে রাবিহা বলেন, ‘আমি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করেছি। এটাই আমার প্রতিবাদ। সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রতি আমার সংহতি প্রকাশ। ’
শুধু এই দুই শিক্ষার্থী নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডির ছাত্র অরুন কুমারসহ অনেকেই রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি নাগরিকত্ব আইনে স্বাক্ষর করার প্রতিবাদে তার অনুষ্ঠান বর্জন করেন তারা।
এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জার্মানির ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ভারতে অধ্যয়নরত জার্মান ছাত্র জেকভ লিনডেনথানকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটি মঙ্গলবার ‘জার্মান প্রতিবাদীকে দেশে ফেরত পাঠালো ভারত’ এই শিরোনাম করে জানায়, সিএএ-র বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এই অপরাধে জার্মান ছাত্রকে দেশে ফিরিয়ে দিলো ভারতের অভিবাসন দপ্তর। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন প্ল্যাকার্ড হাতে। যাতে লেখা ছিল, ‘ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ। সেই ধর্মনিরপেক্ষতা যদি বজায় না রাখা হয়, তা হলে কী হতে পারে আমি জানি। কারণ, আমি জার্মান। ’
ডয়েচে ভেলে জানায়, এই তার অপরাধ। যার জেরে রাতারাতি চেন্নাই আইআইটি থেকে জার্মান ফিরে যেতে হলো ২৪ বছরের জেকভকে। জেকভ দুদেশের শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভারতের চেন্নাইয়ের আইআইটিতে ভর্তি হয়েছিলেন।
ভারতের চলমান আন্দোলনে কয়েক হাজার আটকের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও রয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ করেছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো।
ঢাকা/সাজেদ/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন