ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভালোবাসার সাতপাকে বাঁধা পড়ছে অ্যাসিড দগ্ধ নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসার সাতপাকে বাঁধা পড়ছে অ্যাসিড দগ্ধ নারী

ভালোবাসার মানুষ আগুনে পোড়ে না, দগ্ধ হয় না, এসিডে ঝলসে যায় না। প্রকৃত ভালোবাসা আসে মনের গহীন থেকে।

একটা কুৎসিত হাত ভালোবাসার দাবি নিয়ে তাকে অ্যাসিড ছুঁড়ে মেরেছিল। ডান চোখ নষ্ট হয়েছে, মুখের দগদগে ঘা আজো শুকায়নি। মনের ঘা শুকানো তো অনেক দূরের কথা।

অথচ আরো একটা ভালোবাসার হাত অর্ধ যুগ শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে। সব সময় অভয় দিয়েছে, 'আমিই তোর ডান চোখ।' প্রতিজ্ঞা করেছে অ্যাসিড হামলায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া জীবনটাকে গুছিয়ে রাখার।

মঙ্গলবার তারই আর এক ধাপ পুরণ হতে চলছে এক চোখের সঞ্চয়িতার শুভদৃষ্টি দিয়ে। শর্তহীন ভালোবাসার সাতপাকে এক হতে চলেছে চার হাত। পাত্রের মা-বাবাই এ শুভ অনুষ্ঠানের নেপথ্যে।

ভারতের কলকাতা শহরের অদূরে দমদমের সঞ্চয়িতা যাদবের জীবন অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। মুখে অ্যাসিড ছুঁড়েছিল কুৎসিত ভালোবাসার হাত নিয়ে এগিয়ে আসা জঘন্য এক যুবক।

সেদিন সঞ্চয়িতার সবচেয়ে বড় সহায় হয়ে উঠেছিল দমদমের তরুণ শুভ্র দে। মাসকয়েক আগেই সঞ্চয়িতার সঙ্গে পরিচয়। শুভ্র তখনই জানিয়েছিল সঞ্চয়িতাকে ভালো লাগে শুভ্রর। জবাব পাননি। তবু ফোন পেয়ে অপেক্ষা করেননি শুভ্র। ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। সেই থেকে শুরু।

তারপর যখনই প্রয়োজন হয়েছে, পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন।

সঞ্চয়িতা বলেন, আমার বাবা অনেকদিন নেই, গত বছর মা মারা গেছেন। একদিন শুভ্রর মা বাড়িতে ডেকে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তার পর বিয়ে ঠিক হয়। তারাই সব দায়িত্ব নিয়েছেন। কেনাকাটা, আয়োজন সব।'

তবে অ্যাসিডে ক্ষতবিক্ষত একটা মেয়েকে বৌমা করে ঘরে তুলবেন, এটা প্রথমেই মানতে পারেননি শুভ্রর মা রীতা।

তিনি বলেন, 'আমার একমাত্র ছেলে। এ ভাবে তো ভাবিনি আগে। তাই মানতে সমস্যা হয়েছিল। পরে ভাবলাম, এই বয়সেই মেয়েটার উপর এত ঝড় যাচ্ছে! ওর মা মারা গেল। একা একা কত লড়াই করবে? আর ছেলে যখন ওর পাশে থাকতে চায়, তাই সিদ্ধান্ত নিই, ওদের বিয়ে দেব।'

শুভ্রর বাবা প্রবীর বলেন, 'ও নিজে লড়াই করে যে ভাবে অন্য অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায়, আমি সবসময় বাহবা দিই। ভালোবাসা মন থেকে হয়, তাই ছেলে যা চেয়েছে, মেনে নিয়েছি। বিয়ের পর এমন কিছু ঘটলে কি ফেলে দিতে পারতাম?'

কাছের মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত সঞ্চয়িতা। তিনি বলেন, 'শুভ্রকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি, আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখিস না। কিন্তু কখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি শুভ্র।'

আরো একজন অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী মনীষা পৈলান সঞ্চয়িতার বন্ধু। বিয়ের খবরে খুব খুশি তিনি। তিনি বলেন, 'প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে দুটো কারণে অ্যাসিড ছুঁড়ে। এক, অন্য কেউও যাতে বিয়ে করতে না-পারে। দুই, জীবন স্তব্ধ করে দিতে। সঞ্চয়িতা চাকরি করছে, বিয়েও হচ্ছে। এটা একটা বড় প্রতিবাদ।'

হাইকোর্টে লড়াই করে অভিযুক্তকে জেলে ঢুকিয়েছেন সঞ্চয়িতা। কিন্তু এখনো শাস্তি হয়নি। কবে মামলা উঠবে, তার আশায় দিন গোনেন। তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।  কিন্তু চিকিৎসায় যা খরচ তাতে সে টাকা সামান্যই।

সঞ্চয়িতার ডান চোখে পাথর বসেছে, পাঁচ বার অপারেশন হয়েছে বা চোখে। নাকে দু'বার। আজো পুরোনো ছবি, এখনকার ছবি মেলানো যায় না। কোনদিন যাবেও না। সঞ্চয়িতা তবু শান্তি পাবেন অভিযুক্তর শাস্তি হলে।

হবু বৌমার আইনি লড়াইয়েও সামিল শ্বশুরবাড়ি। শুভ্রর বাবা বলেন, 'আমরা সবসময় আছি। আমরা শুধু চাই, এই ধরনের জঘন্য অপরাধে যেন কঠিনতম শাস্তি হয়। না হলে ওর মতো অনেক জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।'

শুভ্র বলেন, 'প্রতিজ্ঞা করেছি, কোনদিন ছাড়ব না সঞ্চয়িতাকে। এমন রূপকথা তো বারবার লেখার সুযোগ হয় না!’

সূত্র: এই সময়



ঢাকা/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়