ঢাকা     শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ১৭ ১৪৩১

মাছশূন্য হতে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাছশূন্য হতে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর

বাংলাদেশের উপকূলে অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে ‘মৎসবিহীন’ অঞ্চলে পরিণত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সামুদ্রিক প্রাণির সবচেয়ে বড় আবাসস্থলটি। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মাছের প্রজাতি হারিয়ে গেছে, কিছু আছে বিলোপের পথে। বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান মাছের পরিমাণের ওপর এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনের লেখক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘থাই উপসাগরসহ বিশ্বের কিছু সমুদ্র মৎসশূন্য হয়ে গেছে। আমরা চাই না আমাদের বঙ্গোপসাগর সেভাবে শেষ হয়ে যাক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিকারার্থে উদ্বিগ্ন যে, মাছ ধরার পরিমাণ কমানো না হলে আমরা হয়তো আগামী প্রজন্মের জন্য এই সম্পদ হারিয়ে ফেলব।’

পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে শত শত বড় নৌযান অতিরিক্ত মাছ শিকার করছে।

আর স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, তারা যে মাছের ওপর নির্ভরশীল, সেগুলো অবাধে ধরছে ট্রলারগুলো। সরকার এ ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
 


বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ বাংলাদেশের অন্তত ১৫ লাখ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশ সরকারের একটি ত্রিবার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে বাগদা চিংড়ি ও ভারতীয় স্যালমনের মতো সবচেয়ে দামি মাছের প্রজাতিগুলো সম্পূর্ন হারিয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৫ বছর ধরে কর্মরত জসিম নামের এক জেলে জানান, কয়েক বছর আগেও তিনি মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সাগরে থেকে মাছ শিকার করতে পেরেছেন। কিন্তু এখন তিনি ও তার সঙ্গী জেলেরা ২০ ঘণ্টায়ও কোনো মাছ পান না।

তিনি বলেন, ‘আগে আমরা বহু প্রজাতির মাছ শিকার করতাম। কিন্তু এখন সেগুলো পাই না।’

জসিম ও ক্ষুদ্র জেলেদের অভিযোগ, এর জন্য বঙ্গোপসাগরে বড় আকারের মাছ ধরার ট্রলারগুলো দায়ী।

বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের উপকূলে এখন প্রায় ২৭০টি ট্রলার মাছ শিকারে ব্যবহার করা হয়। এর  মধ্যে সবচেয়ে বড়গুলো এক ট্রিপে ৪০০ টন মাছ ধরতে পারে, যা ছোট ট্রলারগুলোর ২০ গুণের সমান।

নৌযান কোম্পানিগুলোর মুনাফার ক্ষুদ্র একটি অংশ সরকার লাইসেন্স ফি বাবদ পেয়ে থাকে। সরকার আগে যেসব লাইসেন্স ইস্যু করেছিল এই কোম্পানিগুলো সেই লাইসেন্স জেলেদের কাছে বিক্রি করে অথবা ভাড়া দেয়। এর ফলে মৎস বিভাগের পক্ষে ট্রলারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল।
 


পার্লামেন্টে পাস হতে যাওয়া নতুন আইনে অবশ্য মৎস বিভাগকে লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে নৌযান কোম্পানিগুলো প্রায়ই বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে উল্টো মামলা করে। যার ফলে বাড়ে জটিলতা।

আকালের এই সময়ে নতুন উৎপাত হিসেবে হাজির হয়েছে সুপার ট্রলার। এই ট্রলারগুলোর আয়তন বিদ্যমান বড় ট্রলারগুলোর দ্বিগুণ। আকার ও ইঞ্জিনের শক্তির কারণে এগুলো দ্রুত গতির মাছ ধরতে পারে। গত বছর এ ধরনের চারটি ট্রলার আসে চট্টগ্রামে। বাংলাদেশি অপরাটেররা এই নৌযানগুলো কেনার পর দাবি করে, মাছ ধরার জন্য এগুলো ব্যবহারের অধিকার তাদের আছে।

এই চারটি নৌযানের মধ্যে দুটির নাম হচ্ছে সি ভিউ ও সি উইন্ড। এগুলোর মূল মালিক থাইল্যান্ডের। সোমালিয়ায় অবৈধভাবে মাছ ধরার অভিযোগে এগুলোর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নোটিস দেওয়া আছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ওসেন মাইন্ড এবং ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন ২০১৮ সাল থেকে এই নৌযান দুটির ওপর নজর রাখছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংস্থা দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে সি ভিউ ও সি উইন্ডের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশকে অবশ্যই এই নৌযান দুটির উপস্থিতির বিষয়টি সোমালিয়া সরকারকে জানাতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌবাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সি ভিউ ও সি উইন্ডের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। প্রথমে তারা মেরামতের কথা বলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। পরে তাদের বের করে দেওয়া হয়।’

 

ঢাকা/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়