ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নিউইয়র্কে করোনায় মারা যাওয়াদের ৭% এশিয়ান, ২১১ জন বাংলাদেশি

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ৩০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিউইয়র্কে করোনায় মারা যাওয়াদের ৭% এশিয়ান, ২১১ জন বাংলাদেশি

মহামারি করোনাভাইরাসে দিশেহারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য একেবারে বিধ্বস্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে। এই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা ২৩ হাজার ৪৭৪ জন ছাড়িয়েছে। নিউইয়র্কে মোট মৃতের ৭ শতাংশ এশিয়ান। তার মধ্যে ২১১ জন বাংলাদেশি। এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।

অবশ্য বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রা, বাসস্থান, অনানুষ্ঠানিক চাকরি ও ডায়বেটিস রোগের কারণে মৃত্যুহার বেশি।

নিউইয়র্কের কুইন্স, ব্রোনক্স ও ব্রুকলিনে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। এসব এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক বেশি। বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা জানেন যে তাদের পরিচিতদের মধ্যে কেউ না কেউ করোনায় মারা গেছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী মো. তাহেরের দেওয়া তথ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রে ২১০ জন বাংলাদেশি করোনায় মারা গেছেন। তার মধ্যে ১৯০ জনই নিউইয়র্কের।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী নিউইয়র্ক শহরের মোট মৃতের ৭ শতাংশ এশিয়ান। তার মধ্যে ঠিক কতজন বাংলাদেশি সেটা এখনো সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। কারণ, নির্দিষ্ট দেশ ধরে মৃতের সংখ্যা হিসাব করা হচ্ছে না। হিসাব করা হচ্ছে- ব্লাক/আফ্রিকান আমেরিকান; হিসপানিক/লাতিনো; হোয়াইট; এশিয়ান অথবা অন্যান্য।

নিউইয়র্কে আওয়াজবিডির প্রধান শাহ আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি কোয়ারেন্টাইনের শুরু থেকেই তথ্য রাখছেন। সম্প্রতি তিনি তার দাদীকে হারিয়েছেন করোনায়। তার মতে অনেকেই বাসায় মারা যাচ্ছে। যেটা তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। প্রতি পাঁচজন মারা গেলে তার মধ্যে এক-দুইজন তালিকার বাইরে চলে যাচ্ছে। তারপরও তার মতে ২১১ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন নিউইয়র্কে। এ ছাড়া আরো ৬০ জন মৃতবরণ করেছেন যারা করোনায় মারা গেছেন কিনা সেটা নির্ধারণ করা যায়নি। কিন্তু সন্দেহ করা হচ্ছে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন।

অনেক পরিবার ভয় পাচ্ছেন যে করোনা আক্রান্ত হয়ে তারা যদি হাসপাতালে ভর্তি হন তাহলে তাদেরকে আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হবে না। তাদের ভেন্টিলেটর দেওয়া হবে না। অথবা তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে না।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রা, চাকরির ধরন, অনেকে একসঙ্গে বসবাস, এখানে-ওখানে থাকা, খাদ্যাভ্যাস, ডায়বেটিসসহ নানা অসুস্থ্যতার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি।

এ বিষয়ে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর ডা. নাদিয়া ইসলাম শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে এটা আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে না যে অনেক বাংলাদেশি মারা যাচ্ছেন করোনাভাইরাসে। শহর অঞ্চলে আমাদের করা জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশি কমিউনিটির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টাইপ-২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। সুতরাং বৈজ্ঞানিকভাবেও বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুহার বেশি এখানে।’

তার উপর রমজান মাস শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। নিউইয়র্কে এমনিতেই খাদ্য সংকট রয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে। এমন সময়ে বিভিন্ন মসজিদ ও সামাজিক সংগঠনগুলো কাজ করে যাচ্ছে খাদ্য সরবরাহে।

শঙ্কার বিষয় হচ্ছে কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে নাগাদ বাংলাদেশিরা নিউইয়র্কে কাজে ফিরতে পারবেন সেটা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। আর স্বাভাবিক হলেই তারা যে আবার কাজ পাবেন সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আবার নানা জটিলতা ও ঝামেলার কারণে সংকটকালিন পাচ্ছেন না বেকার ভাতাও!

সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে খুবই কঠিন সময় পার করছেন বাংলাদেশিরা।

 

ঢাকা/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়