শেষ ছুরিকাঘাতের অপেক্ষায় ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শান্তিচুক্তি পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা ৮৩ বছরের সাইদ ইব্রাহিমকে বিস্মিত করেনি। তার কাছে এটি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর আরেকটি বিশ্বাসঘাতকতা।
সাইদ বলেন, ‘আনোয়ার সাদাতের আল-কুদস সফরের মধ্য দিয়ে এটা শুরু হয়েছিল। মিশরই প্রথম এই দরজা (বিশ্বাসঘাতকতার) খুলেছিল। এর আগে কেউ ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার সাহস দেখায়নি।’
১৯৭৭ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ইসরায়েল সফর করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে আরব দেশগুলোর মধ্যে মিশরই প্রথম ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। ১৯৯৪ সালে মিশরের পথে হাঁটে জর্ডান। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিও ফিলিস্তিনির স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে।
ইসরালের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্কের বিষয়টি ফিলিস্তিনিরা বহু বছর ধরেই জানতো। তবে আমিরাত সেই সম্পর্কের বিষয়ে রাখঢাক মেনে চলতো। তবে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক চুক্তির ঘোষণায় বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেছেন ফিলিস্তিনিরা। এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি দূতকে ইতোমধ্যে আমিরাত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি জেরুসালেম, আল-আকসা ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা সায়েব এরকাত বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জাতীয় বৈধ অধিকারের মূল্যে এই সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে আমিরাত।
ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র আন্দোলনের গোষ্ঠী হামাস বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের পিঠে ছুরিকাঘাত।
শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে জুমার নামাজের পর আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদের ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। ওই ছবির নিচে লেখা ছিল ‘বিশ্বাসঘাতক।’
বছরের পর বছর আরব দেশগুলোর নিশ্চুপ ভূমিকার কারণে দখলদার ইসরায়েলের হাতে নিপীড়ন শিকার ফিলিস্তিনিরা। প্রতি বছরই ইসরায়েল দখল করে নিচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ভূমি। তারপরও ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোকে তুরুপের তাস মনে করা হতো। বৃহস্পতিবার আমিরাতের ঘোষণার পর এখনও নিশ্চুপ ভূমিকায় আছে উপসাগরীয় অঞ্চলের শক্তিশালী দেশ সৌদি আরব। ইসলাম ধর্মের দুই পবিত্র স্থানের তত্ত্বাবধায়ক হওয়ায় আমিরাতের মতো ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে সাহস পাচ্ছে না সৌদি শাসকরা। তবে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন ও ইসরায়েলিদের দহরম-মহরম চোখে পড়ার মতোই। কে জানে হয়তো আমিরাতের যুবরাজের মতোই সৌদি যুবরাজ সেই ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে ফেলবেন। আর সেটি যে ফিলিস্তিনিদের পিঠে অন্তিম ছুরিকাঘাত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাইজিংবিডি