‘আমার সন্তানের মৃতদেহ ফিরিয়ে দাও’
সম্প্রতি তীব্র শীতের মধ্যে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের একটি গ্রামে নিজের সন্তানের জন্য কবর খুঁড়ছিলেন মুস্তাক আহমেদ ওয়ানি। দীর্ঘ সময় নিয়ে একাই কবর খুঁড়ছিলেন তিনি। ওয়ানির এই কাজ আশেপাশের লোকজন নীরবে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তবে সেই কবরে কাউকে শোয়ানো হয়নি। কোমর পর্যন্ত খোঁড়া কবরে দাঁড়িয়ে উপস্থিত লোকজনের দিকে ফিরে মুস্তাক চিৎকার দিয়ে বলে ওঠেন, ‘আমি আমার ছেলের মৃতদেহ চাই। আমি ভারতকে বলছি, আমার সন্তানের মৃতদেহ ফিরিয়ে দাও।’
পুলিশের ভাষ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর শ্রিনগর শহরের বাইরে আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানানোয় মুস্তাকের ছেলে আথার মুস্তাকসহ তিন তরুণকে সরকারি বাহিনী গুলি করেছিল। এরা ছিল ‘সন্ত্রাসীদের একান্ত সহযোগী’ যারা কাশ্মিরে ভারত শাসনকে অস্বীকার করে।
তবে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাদের সন্তানরা সশস্ত্র বিদ্রোহী ছিল না। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।
মুস্তাক বলেন, ‘সেটা ছিল সাজানো বন্দুকযুদ্ধ।’
নিহত তিন জনকে পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরে অজ্ঞাত একটি গ্রামে দাফন করা হয়। শুধু এই তিনজনই নয়, বরং নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত বছর যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছে তাদের সবাইকে অজ্ঞাত গ্রামে দাফন করা হয়েছে। স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি তাদের মৃতদেহ। নিহতদের দেহ নিয়ে যাতে কোনো বিক্ষোভ হতে না পারে সেজন্য ২০২০ সালে এই নীতি চালু করেছে ভারত সরকার।
বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক হত্যা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তার আরেকটি নমুনা ছিল মুস্তাকের ছেলেকে হত্যা। আথারের হত্যার কয়েক মাস পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেনারা অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল। শুরুতে যাদের পাকিস্তানি নাগরিক বলা হয়েছিল পরে তাদেরকে স্থানীয় বলে স্বীকার করা হয়।
পুলিশের তদন্তে পরে জানা যায়, এক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর দুই সোর্স তিন তরুণ হত্যা করে। এর আগে তাদের পরিচয় নষ্ট করা হয় এবং তাদেরকে চরমপন্থী সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া হয়। ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে এরপরও আথারের কবরের সন্ধান দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা/শাহেদ