তালেবানের মধ্যে দ্বন্দ্ব কতটা প্রকট?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
২০ বছর পর ক্ষমতায় ফেরার এক মাসের মধ্যে তালেবানের মধ্যে বিভক্তির আসতে শুরু হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে উপপ্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বরাদার হঠাত করে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে গোষ্ঠীটির বিভক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
প্রথমে খবর আসে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের অভ্যন্তরে কোন্দল চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বরাদার। পরে বরাদারের একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে তালেবান। তাতে বরাদার জানিয়েছেন, কাবুল থেকে কান্দাহারে চলে যাওয়ার কারণেই তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না। তালেবানের সদস্যদের মধ্যে যে ‘সহানুভূতি রয়েছে তা পরিবারের সদস্যদের তুলনায় অনেক বেশি’ বলে দাবি করেন তিনি।
বরাদারের এই অডিও বার্তার সত্যতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে। মৃত্যু কিংবা আহতের গুজব উড়িয়ে দিতে শেষ পর্যন্ত তার ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, গত সোমবার জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বরাদার।
সূত্রের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা অনলাইন জানিয়েছে, তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ খুবই বাস্তব। আর তাদের মধ্যে যদি বিবাদ বেড়ে যায় তাহলে আফগান জনগণের জন্য তা আরও সংকটের সৃষ্টি করবে।
বেশ কয়েক বছর তালেবানের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন এমন এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, তালেবানের মধ্যে বিভক্তির মূল কারণ রাজনৈতিক-সামরিক বিভাজন। গোষ্ঠীটির কট্টোরপন্থি সদস্যরা মনে করেন, ২০ বছর লড়াইয়ের অর্জন তাদের।
তালেবানের সঙ্গে এক দশক সম্পর্ক রাখা একটি রাজনৈতিক সূত্র তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার বিভক্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা নেতাদের মধ্য থেকে শুরু করে রাজপথে থাকা তালেবান সদস্যদের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে। তালেবান যোদ্ধারা বিজিত অঞ্চল দখলের পর সাবেক সরকারের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। অথচ কয়েক দিন আগেই তালেবান নেতৃত্ব এগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
তালেবানের মুখপাত্র এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ কাবুল দখলের দুদিন পর বলেছিলেন, ‘সামরিক কিংবা বেসামরিক যারই হোক না কেন কারো বাড়িতে প্রবেশ না করতে আমরা সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
আল-জাজিরা জানিয়েছে, তালেবানের মধ্যে বিভাজন ব্যক্তিত্বের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তবে আগের প্রশাসনগুলোর তুলনায় তালেবান কেবল মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী সদস্য বা রাজনৈতিক মতাদর্শ দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী নয়, বরং এর বিভাজন অনেক বেশি মৌলিক। তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুব কট্টোর পন্থিদের একাংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বিপরীত দিক থেকে উপপ্রধানমন্ত্রী বরাদার ও উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শের মুহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই অনেক বেশি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই অংশটি আফগানিস্তানকে অনেক বেশি অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছেন।
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে তালেবানের মধ্যে। তালেবান সরকারের মূল ক্ষমতা রাখা হয়েছে কান্দাহারের শুরা কাউন্সিলের হাতে। গোষ্ঠীটির বর্তমান নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা কেন্দ্রীক এই শুরা কাউন্সিলই আফগানিস্তানের প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ বলে মনে করে একটি অংশ। এর ফলে নতুন প্রশাসনে নিজেদের অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েক জন তালেবান নেতা বিব্রত বোধ করছেন।
এক সাংবাদিক বলেছেন, ‘আদতে তালেবান সরকারের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই।’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের আশঙ্কা তালেবান নেতাদের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে আরও বাড়তে শুরু করে তাহলে রাজধানী কাবুল ও অন্যান্য প্রদেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ঢাকা/শাহেদ