ঢাকা     শনিবার   ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২৫ ১৪৩১

‘সাংবাদিকতা এখানে মারা গেছে’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৮:২২, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘সাংবাদিকতা এখানে মারা গেছে’

২০২২ সালের ৫ এপ্রিল ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্য শ্রীনগরের বাটামালুতে আসিফ সুলতানের পরিবারে আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছিল। আদালত ও থানায় সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় দৌঁড়ঝাপের পর পরিবারটি এদিন জানতে পেরেছিল, তাদের পরিবারের সন্তান সাংবাদিক আসিফ সুলতানের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

ওই দিন আসিফের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় স্বজনরা ভীড় জমিয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও আসিফের বাড়ি ফেরা হয়নি। ১০ এপ্রিল আসিফের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আনার খবর তারা জানতে পারেন। আসিফকে মুক্তি দেওয়া হয়নি এবং তাকে কাশ্মীরের বাইরে একটি কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়।

আসিফের বাবা মোহাম্মদ সুলতান বলেন, ‘আমরা বিধ্বস্ত হয়েছি কিন্তু আদালতে লড়াই চালিয়ে যাব। সবাই জানে সে নির্দোষ, তাই আমরা শেষ পর্যন্ত জয়ী হব।’

আরো পড়ুন:

আসিফ সুলতানের বিরুদ্ধে প্রথমবার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) নামে একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। এই আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগটি আরেকটি বিতর্কিত আইনের অধীনে আনা হয়। এই জননিরাপত্তা আইনটিতে দুই বছর পর্যন্ত চার্জ ছাড়াই আটক রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আসিফের বাবা মোহাম্মদ সুলতান দাবি করে, তার ছেলে সাংবাদিকতার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। বিশেষ করে একটি ভারতবিরোধী জঙ্গি সম্পর্কে একটি নিবন্ধ, যেটি আসিফ ২০১৮ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হওয়ার এক মাস আগে লিখেছিলেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত সরকারের এসব অভিযোগের তদন্ত করেছে। তাতে দেখা গেছে, দিল্লি সরকার কাশ্মীরকে সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানো এবং নীরব করার জন্য একটি অশুভ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রচারণা চালাচ্ছে। বিবিসির সঙ্গে কথা বলা দুই ডজনেরও বেশি সাংবাদিক জানিয়েছেন, তারা সরকারের পদক্ষেপকে তাদের জন্য একটি সতর্কতা হিসাবে দেখেন।

একটি ডিজিটাল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ফাহাদ শাহকে  ‘সন্ত্রাস প্রচারের’ অভিযোগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এর এক মাস আগে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সাজাদ গুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি স্থানীয়দের ভারত বিরোধী স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। সাজাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

সর্বশেষ সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয় চলতি বছরের মার্চে। ইরফান মেরাজের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অর্থায়নের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিবিসি বারবার আঞ্চলিক প্রশাসন ও পুলিশের কাছে অভিযোগগুলোর বিষয়ে জবাব চেয়েছে। কিন্তু এর কোনো উত্তর তারা দেয়নি।

বিবিসি যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একবার পুলিশ ডেকেছে। তাদের মধ্যে অনেকেকই একটি প্রতিবেদনের জন্য একাধিকবার পুলিশের কাছে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন পুলিশের সুর ভদ্র। অন্যরা বলেছেন, তাদের ক্ষোভ ও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

একজন সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা ভয়ে থাকি যে কোনো প্রতিবেদনেই আমাদের শেষ প্রতিবেদন হতে পারে। তারপরে আপনি জেলে থাকবেন।’

আরেকজন সাংবাদিক বলেছেন, ‘সাংবাদিকতা মারা গেছে এবং কাশ্মীরে দাফন হয়ে গেছে।’

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়