ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যে পুনরায় সংঘাতে জড়াবে যুক্তরাষ্ট্র?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৯ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৯:০৮, ৯ নভেম্বর ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যে পুনরায় সংঘাতে জড়াবে যুক্তরাষ্ট্র?

ইরাকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ড্রোন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সংঘাতের গভীরে টেনে আনা থেকে রক্ষায় সাহায্য করেছে। ২৬ অক্টোবর সূর্যোদয়ের আগে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা ইরবিল বিমান ঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা ড্রোনটি মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করে। ভোর ৫টার দিকে ড্রোনটি মার্কিন সেনাদের আবাসন ব্যারাকের দ্বিতীয় তলায় বিধ্বস্ত হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনটি বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র একজন পরিষেবা সদস্য সামান্য আঘাত পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাগ্যবান ছিল, কারণ ড্রোনটি বিস্ফোরিত হলে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারত।

পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকান সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায় গত তিন সপ্তাহে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা মার্কিন বাহিনীতে কমপক্ষে ৪০টি পৃথক ড্রোন এবং রকেট হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় এখনও পর্যন্ত মাত্র কয়েক ডজন সেনা সদস্য ছোটখাটো জখম হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক রকেট এবং একমুখী হামলার ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার ৪০০ সেনা রয়েছে।

আরো পড়ুন:

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির প্রাক্তন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড শেঙ্কার জানিয়েছেন, ইরান ও তার মিত্র গোষ্ঠী বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘর্ষ চায় বলে মনে হচ্ছে না, তবে ঝুঁকি বাড়ছে। একটি বড় হামলার সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে, যা ‘খুবই বাস্তবসম্মত উদ্বেগ।’

তিনি ইরাকি এবং সিরিয়ার মিলিশিয়াদের সম্পর্কে বলেন, ‘আমি মনে করি তারা বিপুল সংখ্যক মার্কিন সেনাকে হত্যা করার পরিবর্তে হয়রানি করার জন্য আক্রমণগুলো চালাচ্ছে। কিন্তু তারা আরও অনেক কিছু করতে পারে।’

গাজায় ইসরায়েলে হামলার পর ইয়েমেনের হুতিরাও মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলার হুমকি দিচ্ছে। এই হুতিদেরও সমর্থন দিচ্ছে ইরান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লেবাননের হিজবুল্লাসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে সংঘাত সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তবে তিনি এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়া হিসাবে কী করবেন সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানাতে অস্বীকার করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে সামরিক শক্তি প্রদর্শন যেকোনো গুরুতর আক্রমণকে প্রতিরোধ করবে। মধ্যপ্রাচ্যে দুটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার একটি ওহিও শ্রেণির সাবমেরিনও ওই অঞ্চলে চলে গেছে।

কর্মকর্তাদের মতে, প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং উচ্চমাত্রার বিমান প্রতিরক্ষা পাঠানোর বাইরেও মার্কিন সামরিক বাহিনী এই অঞ্চলে তার কয়েক হাজার সেনাকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে টহল বৃদ্ধি, প্রবেশ সীমাবদ্ধ করা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ বাড়ানোর মাধ্যমে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা।

মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন প্রশাসনের এই প্রতিক্রিয়া পর্যাপ্ত নয় বলে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটররা সমালোচনা করেছেন।

সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সদস্য রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বলেন, ‘তেহরানে তারা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইরানের উপর কঠোর বিধি আরোপ করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ না করা পর্যন্ত ইরান আমেরিকানদের টার্গেট করতে থাকবে।’

কারো কারো ক্ষেত্রে মার্কিন সেনাদের উপর সাম্প্রতিক হামলা বৈরুতে বিশাল ট্রাক বোমা হামলার বেদনাদায়ক স্মৃতিকে আলোড়িত করে। ৪০ বছর আগে একটি মেরিন ব্যারাকে ওই হামলা ২৪১ সেনা নিহত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছিল। তবে গোষ্ঠীটি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

১৯৮৩ সালে ওই ঘটনার সময় ডেভিড মাদারাস ছিলেন ২২ বছর বয়সী একজন মেরিন সেনা। হামলায় আহত হয়েছিলেন তিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় বোমা হামলার আগে রকেট হামলা, মর্টার আক্রমণের শিকার হচ্ছি। তাহলে কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে?’

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়