ভিউ পেতে দুর্ঘটনার নাটক, ইউটিউবারের দণ্ড

বেশি ভিউ পেতে করলেন নাটক। তাও আবার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছিলেন এক ইউটিবার। পরে তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলায় ৬ মাসের জেল হয়েছে তার। ট্রেভর জ্যাকব নামের ৩০ বছর বয়সী ওই মার্কিন ইউটিউবার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই কাণ্ড করেন। গত সোমবার তার সাজা ঘোষণা করেন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত।

কেন্দ্রীয় প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, জ্যাকব নিজের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ কাভারেজ তৈরি করতে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই নাটক সাজান। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, স্বেচ্ছায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত করা এবং প্রমাণ লোপাটের দায়ে জ্যাকবকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে।

অভিযুক্ত ইউটিউবার কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য তৈরি করা ভিডিওতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত করার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। সাজা ঘোষণার পর জ্যাকব এক বিবৃতিতে বলেন, সাজার সিদ্ধান্ত ‘সঠিক’।

ট্রেভর জ্যাকব ইউটিউবারের পাশাপাশি একাধারে পাইলট এবং স্কাইডাইভারও। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর তিনি  সান্তা বারবারা কাউন্টির লোমপক সিটি বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করেন। তবে অবতরণের পরিকল্পনা ছিল না তার।

প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেওয়া এবং উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ভিডিও ধারণের পরিকল্পনা করেছিলেন জ্যাকব। এর জন্য উড়োজাহাজের বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই ক্যামেরা বসান এবং নিজের কাছে একটি ক্যামেরা ও সেলফি স্টিক রাখেন।

উড্ডয়নের প্রায় ৩৫ মিনিট পরে সান্তা মারিয়ার কাছে লস প্যাড্রেস জাতীয় বনের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় জ্যাকব লাফ দেন এবং প্যারাসুট নিয়ে মাটিতে নামার ভিডিও করেন। এরপর তিনি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গায় যান এবং সব ভিডিও ডেটা সংগ্রহ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এই ঘটনার দুই দিন পর জ্যাকব ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডে জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা বলেন তিনি। জ্যাকব বলেছিলেন, উড়োজাহাহের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং নিরাপদ অবতরণের জায়গা খুঁজে না পাওয়ার কারণেই প্যারাসুট নিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। এমনকি দুর্ঘটনাস্থল কোথায় তিনি জানেন না। অথচ এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর এক বন্ধুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং ধ্বংসাবশেষ লোপাট করেন।

প্রায় এক মাস পর জ্যাকব ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করেন ‘আই ক্র্যাশড মাই এয়ারপ্লেন’ নামে। ১২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়া, জ্যাকবের প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেওয়া এবং মাটিতে নামার দৃশ্য দেখা যায়।

ভিডিওটি লাখ লাখ ভিউ পেয়েছে। তবে কিছু দর্শক এটি সত্যিই দুর্ঘটনা কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কারণ ভিডিওতে দেখা যায়, জ্যাকব আগে থেকেই প্যারাসুট পরেছিলেন, প্লেনটিকে নিরাপদ অবতরণ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কোনো চেষ্টা করেননি এবং লাফ দেওয়ার সময় ক্যামেরা ও সেলফি স্টিক সঙ্গে রাখেন। 

কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জ্যাকব তার আপিল চুক্তিতে স্বীকার করেছেন, তিনি ভিডিও তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চেয়েছিলেন। তিনি মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (এফএএ) নিরাপত্তা পরিদর্শকের কাছেও মিথ্যা বলেছিলেন। এর জেরে জ্যাকবের পাইলট লাইসেন্স বাতিল করে এফএএ। আর সবশেষ ৬ মাসের জেল দেওয়া হয় এই ইউটিউবারকে। 

সূত্র: বিবিসি