ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

যেভাবে ইরানের হামলা ঠেকালো ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১৪ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৭:০৫, ১৪ এপ্রিল ২০২৪
যেভাবে ইরানের হামলা ঠেকালো ইসরায়েল

ইসরায়েলজুড়ে শনিবার রাতে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠেছিল। কারণ ইরান ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো সরাসরি হামলা চালিয়েছিল এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরায়েলের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল করা হয়েছিল।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলেছে, ‘ইরান থেকে ছোড়া কয়েক ডজন ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ভূ-পৃষ্ঠে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ইসরায়েলের ভূখণ্ডের দিকে আসছে। ইসরায়েলি ভূখণ্ড অতিক্রম করার আগে কৌশলগত মিত্রদের সঙ্গে যৌথভাবে অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা এর ৯৯ শতাংশকে প্রতিহত করেছি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সাফল্য।’

ইসরায়েল আরও জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়নি। এই হামলায় তাদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইরানের এই হামলা প্রায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কীভাবে ইরানের এই হামলা প্রতিহত করলো ইরান? আসুন জেনে নেই কী ছিল ইসরায়েলের সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়।

আরো পড়ুন:

অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম কী

ইসরায়েলের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থার সহযোগিতায় অ্যারো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এটি হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা যা ইসরায়েলের বহু স্তরযুক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরের স্তর। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টা হিসাবে এর উন্নয়ন শুরু হয়েছিল। ১৯৯০ এর দশকে অ্যারো ওয়ান সিস্টেমের কমপক্ষে সাতটি ফ্লাইট পরীক্ষা করা হয়। আরও গবেষণার পর হালকা ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় ২০০০ সালে অ্যারো-২ নামে আরেকটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে ইসরায়েল উন্নয়ন করে অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। গত বছর এটি মোতায়েন করা হয় এবং এটি সফলভাবে হুতিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

বিমান প্রতিরক্ষা অস্ত্রাগারে অ্যারো-২ ক্ষেপণাস্ত্রের সংযোজন ইসরায়েলকে উপরের বায়ুমণ্ডলে হিট অ্যান্ড কিল পদ্ধতির সাথে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিরোধের ক্ষমতা দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শত্রুর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তার অবতরণ পর্যায়ের আগেই নিস্ক্রিয় করা।

ইসরায়েল আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং অ্যারো ডিফেন্সের সমন্বয়ে ত্রি-স্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। বহুল পরীক্ষিত আয়রন ডোম সিস্টেম সক্রিয়ভাবে ড্রোন ও স্বল্প পরিসরের হুমকিকে আটকাতে মোতায়েন করা হয়েছিল। মাঝারি থেকে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় কাজ করে ডেভিডস স্লিং নামে পরিচিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

যেভাবে কাজ করে অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম

অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে সেগুলোর রকেটে দ্বি-পর্যায়ের সলিড প্রপেলান্ট বুস্টার রয়েছে। এটি শব্দের ৯ গুণ গতিতে লক্ষ্যবস্তুর দিকে পৌঁছতে সক্ষম। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে ইএল/এম-২০৮০ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার গ্রিন পাইন ফায়ার কন্ট্রোল রাডার (এফসিআর), একটি হ্যাজেলনাট ট্রি লঞ্চ কন্ট্রোল সেন্টার (এলসিসি) এবং একটি সিট্রন ট্রি যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। গ্রিন পাইন রাডার দূরপাল্লার লক্ষ্য শনাক্ত করে এবং একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ ১৪টি লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে পারে। এফসিআর সিস্টেমের ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রতিরোধ করতে পারে। গ্রিন পাইন রাডারের কার্যকর পরিসীমা ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।

রাডার ক্রমাগত অঞ্চলের দিকে আসা হুমকি সনাক্ত করে। একবার একটি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত হয়ে গেলে, এর আনুমানিক গতিপথ, গতি এবং ক্ষেপণাস্ত্রটি শহর বা সামরিক স্থাপনার মতো কৌশলগত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হলে সে সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে রিয়েল টাইম তথ্য সরবরাহ করে।

ক্ষেপণাস্ত্রটি উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং বুস্টার রকেটটি শব্দের চেয়ে ৯ গুণ বেশি শক্তিতে উড়ে যায়। রকেটে থাকা ফিনড কিল ভেহিকেলটি ক্ষেপণাস্ত্র অনুসন্ধানকারীর নির্দেশিত দিকে তার বিস্ফোরণকে ফোকাস করতে পারে। যদি এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয় তবে ফ্র্যাগমেন্টেশন ওয়ারহেড টার্গেটের ৪০ মিটারের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়।

অ্যারো রকেট ধ্বংসের অস্ত্র হিসাবে গতিশক্তি ব্যবহার করার নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি। অ্যারো রকেটের হাইপারসনিক গতি এটিকে স্যাটেলাইট বিরোধী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়। এই অ্যারো ডিফেন্স সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়