ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন, উদ্বিগ্ন পশ্চিমারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১৮ জুন ২০২৪   আপডেট: ১২:৪০, ১৮ জুন ২০২৪
২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন, উদ্বিগ্ন পশ্চিমারা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন। দেশটির নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করতে পুতিন আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে পা রাখবেন বলে জানা গেছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিং জং উন। ওই সময়ে তিনি পুতিনকে পিয়ংইয়ংয়ে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে পুতিন আজ উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন।

এর আগে সবশেষ ২০০০ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পুতিন উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন। তখন উত্তর কোরিয়ার নেতা ছিলেন বর্তমান নেতা কিম জং উনের পিতা কিম জং ইল। সেই হিসেবে ২৪ বছর পর ফের উত্তর কোরিয়ায় পা রাখতে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।  

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে পুতিন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির সংবাদপত্র রডং সিনমুন মঙ্গলবার এই সফর উপলক্ষে দেওয়া পুতিনের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। সেখানে পুতিন লিখেছেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, তার বিপরীতে আমরা একটা বিকল্প বাণিজ্য পদ্ধতি ও পারস্পরিক সমঝোতায় পৌছতে পারব। একই সঙ্গে আমরা ইউরেশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে একটা রণকৌশল তৈরি করতে পারব।’ 

এই চিঠিতে তিনি একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়াকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ প্রয়োগ করছে, ব্ল্যাকমেইল করছে এবং অব্যাহতভাবে সামরিক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, সেটি প্রতিরোধে রাশিয়া পিয়ংইয়ংকে সমর্থন দিয়ে যাবে।’

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ‘এই দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক’ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ক্রেমলিন এই সফরকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

রাশিয়ান গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, পুতিন ও কিম নিরাপত্তা চুক্তিসহ নানা ধরনের অংশীদারী চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেন এবং মিডিয়াকে যৌথ বিবৃতি দেবেন।

জানা গেছে, পুতিন পিয়ংইয়ংয়ের কুমসুসান গেস্টহাউসে থাকবেন, যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় তার রাষ্ট্রীয় সফরের সময় অবস্থান করেছিলেন।

পুতিন তার নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভের সঙ্গে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাকও প্রতিনিধি দলে থাকছেন।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম গত সপ্তাহে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ‘অটুট বন্ধন’-এ পরিণত হয়েছে। 

গত বছর ক্রেমলিনে কিমের সঙ্গে বৈঠকের সময় পুতিন বলেছিলেন, তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার ‘সম্ভাবনা’ দেখছেন। অন্যদিকে, কিম ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ‘জয়’ কামনা করেছিলেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার (১৭ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুতিনের এই সফর নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হলো, এই দুটি দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে পিয়ংইয়ং ও ক্রেমলিনের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। 

পুতিন ২০২২ সালে পূর্ণ মাত্রায় ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেন এবং তখন থেকেই সেখানে পশ্চিমা সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরপরই কিম মুষ্টিমেয় বিশ্ব নেতাদের একজন হয়ে ওঠেন যারা পুতিনের যুদ্ধকে সুস্পষ্টভাবে সমর্থন দেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে উত্তর কোরিয়া। এর বিনিময়ে তারা পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে। তবে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া উভয়ই অস্ত্র চুক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

উত্তর কোরিয়ার পর, রুশ প্রেসিডেন্ট কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ও দীর্ঘদিনের মিত্র ভিয়েতনাম সফর করবেন বলে জানা গেছে।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়