ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

গুরুর পায়ের ধুলো নিতে গিয়েই কি শেষ শতাধিক প্রাণ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ৩ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৮:০২, ৩ জুলাই ২০২৪
গুরুর পায়ের ধুলো নিতে গিয়েই কি শেষ শতাধিক প্রাণ?

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান অনেকে। ছবি: রয়টার্স

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরসজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। সিকান্দরারাউ এলাকার স্থানীয় হাসপাতাললোর বাইরে এখন শুধুই কান্নার রোল। স্বজন হারানোর কান্না।কেউ কেউ আবার হাসপাতালের চারপাশ ছুটে বেড়াচ্ছেন পরিজনের খোঁজে। আদৌ বেঁচে আছেন কী না জানেন না তারা।

তবে এ ঘটনায় এখন মুখ খুলছেন অনেকে। এ নিয়ে অনেকের দাবি, পাল্টা দাবি প্রকাশ্যে আসছে।পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সৎসঙ্গের আয়োজক কমিটিকেই দায়ী করছেন অনেকে। অনেকে প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন। অনেকের আবার দাবি, ভক্তদের হুড়োহুড়ির কারণেই এই দুর্ঘটনা।

যদিও এই ঘটনায় অনেকে স্বঘোষিত গুরু নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ‘ভোলে বাবা’র দিকে আঙুল তুলেছেন, যার আশ্রমে ওই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, ভোলে বাবার ‘চরণধূলি’ পাওয়ার তাগিদেই বিপত্তি বাধে সৎসঙ্গস্থলে।

ভোলে বাবাকে প্রণাম করার জন্য হাজার হাজার লোকের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তখনই পদপিষ্ট হয়ে মারা যান অনেকে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল একটি খোলা মাঠে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থান থেকে অনেক ভক্ত এসেছিলেন সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি যখন শেষ হওয়ার মুখে, তখনই ভক্তরা ভোলে বাবার আশীর্বাদ এবং তার পদধূলি পেতে ভিড় করে এগিয়ে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই সময়ই বিপত্তি ঘটে। পদধূলি পাওয়ার হুড়োহুড়িতে মাটিতে হোঁচট খেতে শুরু করেন ভক্তরা। অনেকে পড়ে যান। বাকিরা তাদের পদদলিত করে চলে যান।

এই দাবির মধ্যে যুক্তিও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। হাথরসের ওই সৎসঙ্গে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমেছিল। কেউ বলছেন সেই সংখ্যা ১০ হাজার, কেউ বলছেন ৫০ হাজার। আবার কারও কারও মতে সৎসঙ্গদের অনুগামীদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছিল। অর্থাৎ, সেই ভিড়ের কিছু অংশও যদি ভোলে বাবাকে প্রণাম করতে উদ্যত হন, তা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, সৎসঙ্গের জন্য যে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল, তা ঘেরা ছিল। পাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্যান্ডেল খোলামেলা থাকলেও আর্দ্রতা এবং গরমের কারণে সবাই হাঁসফাঁস করছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শকুন্তলা দেবী বলেন, ধর্মীয় আয়োজন শেষ হওয়ার পরপর একসঙ্গে অনেক মানুষ বের হয়ে আসছিলেন। রাস্তায় বেরিয়েই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্য পড়ে পদদলিত হয় মানুষ।

সুরেশ নামের আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি এখানে এসেছিলাম। আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। মাইকে ঘোষণা দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

ছবি: পিটিআই

ভিড়ের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে হারিয়ে খুঁজছিলেন একজন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আগ্রা থেকে এখানে এসেছি। ২০ থেকে ২৫ জন এখানে আগ্রা থেকে এসেছেন। ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়িতে আমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছি। পুলিশ বলছে, তারা কিছুই জানে না।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে হাথরসের সিকান্দরারাউ এলাকায় ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার, রয়টার্স

/ইমন/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়