ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩২

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান যেভাবে নয়াদিল্লির জন্য দ্বিধা সৃষ্টি করছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১৩ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ২০:১৫, ১৩ আগস্ট ২০২৪
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান যেভাবে নয়াদিল্লির জন্য দ্বিধা সৃষ্টি করছে

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই ব্যাপক জল্পনা চলছে, তিনি অন্য কোনো দেশে আশ্রয় চাইবেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাার ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যে আশ্রয় চাওয়ার পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি।

বাংলাদেশে ইতিমধ্যে, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় নতুন অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সাথে কীভাবে যুক্ত হতে হবে সে বিষয়ে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার তাদের বিকল্পগুলো যত্ন সহকারে বিবেচনা করছে।

আরো পড়ুন:

নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে মানব পাচার, অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন- বিশেষ করে বাংলাদেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের সীমান্তে, যেগুলোতে সহিংস বিদ্রোহের প্রবণতা রয়েছে। ভারত এই নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হাসিনার প্রশাসনের উপর নির্ভর করতে সক্ষম হয়েছিল। তার ক্ষমতাচ্যুত নয়াদিল্লিকে কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।

ভারতের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভাগ্য, যেখানে হিন্দুরা দেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং তাদের দেশে হাসিনার উপস্থিতি উত্তেজনা সৃষ্টি করুক এমন কিছু চায় না।

পাকিস্তানে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় ​​বিসারিয়া ডিডব্লিউকে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার উপস্থিতি ভারতের জন্য একটি সূক্ষ্ম দ্বিধা তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘যদিও ভারত তার বন্ধুদের আতিথেয়তা দিতে চায়, এমনকি যারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, বিশেষ করে হাসিনা যখন হট পটেটো। ভারতে তার টানা অবস্থানের ফলে কথিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে প্রত্যর্পণের দাবি শুরু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বিসারিয়া জানান, হাসিনার উপস্থিতি ঢাকার নতুন অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বা অন্য কোনও পশ্চিমা দেশে স্থায়ী আশ্রয় পাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এবং তার আশ্রয়দাতাকে বিব্রত না করার জন্য, শেখ হাসিনা নিজেই ভারতে অস্থায়ী অতিথি হওয়াকে বেছে নেবেন।’

সাবেক এই কূটনীতি জানান, ভারত তার ভূখণ্ডে ‘নির্বাসিত সরকার’ এর পক্ষে অবস্থান নেবে না। কারণ বিষয়টি ‘নতুন বাংলাদেশ প্রশাসনের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েবে।’

নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য আয়দেব রানাডে বলেছেন, হাসিনা ‘এমন একটি দেশে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে চাইবেন যেখানে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা কম বা নেই।’

বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, হাসিনার ভারতে অবস্থানের একটি সময়সীমা নির্দেশ করা কঠিন হবে এবং বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

তিনি বলেন, ‘শেষবার যখন ১৯৭৫ সালে তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং ১৯৮১ সালে তার দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। চ্যালেঞ্জগুলো ব্যক্তিগত প্রকৃতির হতে পারে। আমি মনে করি তিনি তার পছন্দের অন্য দেশে যেতে চাইবেন কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন হলে তার দল তাকে দেশে চাইবে।’

ভারত বাংলাাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। নয়া দিল্লি সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। উভয় পক্ষেরই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করার কথা ছিল।

জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সঞ্জয় ভরদ্বাজ জানান, বাংলাদেশের যেকোনো সরকারের পক্ষে ভারত থেকে নিজেকে দূরে রাখা অপ্রয়োজনীয়।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান কম রাজনৈতিক এবং বেশি একটি কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের নৈকট্য একটি প্রাকৃতিক বাণিজ্য সুবিধার মধ্যে। ভাগ করা স্থল সীমানা ও সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবহন সংযোগগুলো পণ্য চলাচলের সুবিধা দেয়, যা প্রায়শই চীনের মতো দূরবর্তী স্থান থেকে আমদানির তুলনায় কম খরচের। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত ও এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালক ভারত থেকে আসা কাঁচামাল...।’

আপাতত ভারত তার সব বাণিজ্যিক বিকল্প বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত রাখছে। অবশ্য শেখ হাসিনা দেশটিতে কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি দিল্লি।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং-এর সাবেক প্রধান অমরজিৎ সিং দুলাত বলেন, ‘তিনি কোথায় যাবেন? আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে এবং দেখতে হবে কীভাবে খেলাটা হয়, বিশেষ করে যদি ভারত নতুন সরকারের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায়।’

ডয়েচে ভেলে থেকে সংক্ষেপিত

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়