সন্তানদের মৃতদেহ কোলে নিয়ে ১৫ কিমি হেঁটে গ্রামে ফিরলেন দম্পতি

শোকে পাথর হয়ে গেছে মুখ। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থাতেও হেঁটেই চলেছেন তারা। কাদাপথ ধরে হেঁটে চলেছেন পাশাপাশি। মাঝেমধ্যেই ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে উঠছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের কাঁধেই মাথা নোয়ানো দুই সন্তান। শরীরের উপরিভাগ সাদা কাপড় আর চাদর দিয়ে মোড়ানো দুই সন্তানেরই পা উন্মুক্ত।

এভাবেই মৃত দুই সন্তানকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন তারা। সন্তানদের লাশ নেওয়ার জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স মেলেনি তাদের। না, ওদের সন্তানরা ঘুমোচ্ছে না। মহারাষ্ট্রের গঢ়চিরৌলিতে এ ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিরোধী দলীয় এক নেতা এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গঢ়চিরৌলির বাসিন্দা ওই দম্পতির দুই শিশুপুত্র জ্বরে ভুগছিল। সন্তানদের সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি দম্পতি। অর্থাভাবে থাকা দম্পতি সন্তানদের কোলে করে নিয়েই ১৫ কিলোমিটাার দূরের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই সন্তানের অবস্থার আরো অবনতি হয়। সময়মতো চিকিৎসা না মেলায় মৃত্যু হয় দুই শিশুর। দুই সন্তানের মৃত্যুতে দিশাহারা হয়ে পড়েন দম্পতি। শেষমেশ সন্তানদের দেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করেন। কিন্তু তা-ও জোটেনি তাদের। উপায় না দেখে শেষে দুই সন্তানের দেহ কোলে নিয়েই বাড়ির পথে হেঁটে রওনা হন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সামলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও। 

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ওড়িশার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাঝির স্ত্রীর মৃত্যু হয় এক সরকারি হাসপাতালে। অতিকষ্টে চিকিৎসার খরচটুকু জোগাড় করতে পারলেও স্ত্রীর মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেননি হতদরিদ্র দানা মাঝি। হাসপাতালে বার বার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। অগত্যা স্ত্রীর দেহ কাঁধে চাপিয়েই ৬৭ কিলোমিটার দূরে নিজের গ্রামে ফেরেন তিনি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশে। প্রয়াগরাজে এক ব্যক্তির পুত্রের মৃত্যু পর তার দেহ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স মেলেনি বলে অভিযোগ ওঠে। শেষে কাঁধে করেই সন্তানের দেহ নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরেন ওই ব্যক্তি।