ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

ভারতের অরুণাচল সীমান্তের কাছে হেলিপোর্ট বানাচ্ছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৫:০১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভারতের অরুণাচল সীমান্তের কাছে হেলিপোর্ট বানাচ্ছে চীন

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত ঘেঁষে নতুন একটি হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে চীন। দুই দেশের মধ্যবর্তী সীমানা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিতর্কিত এই সীমান্ত অঞ্চলে চীনা সেনাবাহিনীকে জরুরি  পরিস্থিতিতে দ্রুত পৌঁছানোর লক্ষ্যেই হেলিকপ্টার বন্দর নির্মাণ করছে বেইজিং। 

বুধবার (১৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন থেকেই অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে আসছে চীন। ফলে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় বেইজিংয়ের এই কার্যক্রম অরুণাচল নিয়ে ভারত সরকারকে নতুন করে চাপে ফেলতে পারে। 

অরুণাচল সীমান্তে চীনের হেলিপোর্ট নির্মাণের বিষয়টি স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে। তিব্বতের স্বয়ত্তশাসিত অঞ্চলের অন্তর্গত গোংরিগাবু চু নদীর তীরে নিংচি এলাকায় হেলিপোর্টটি তৈরি হচ্ছে। ওই এলাকা চীনের ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে। কিন্তু যেভাবে ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে চীন, তাতে দিল্লির উদ্বেগ বাড়ছে।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি ও ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনো স্থাপনা ছিল না। হঠাৎ করেই সেখানে হেলিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের ছবিতে নির্মাণের জন্য জায়গা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। এরপর, ১৬ সেপ্টেম্বর ম্যাক্সার টেকনোজিসের স্যাটেলােইটের তোলা ছবিতে দেখা যায়, নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

নির্মাণাধীন হেলিপোর্টটিতে ৬০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। সেখান থেকেই ওঠানামা করবে হেলিকপ্টার, যা উঁচু পার্বত্য এলাকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বেশি ওজনের সরঞ্জামও ওঠানামা করতে পারবে সেখানে। হেলিপোর্টে কমপক্ষে তিনটি হ্যাঙ্গারও দেখা গেছে, একটি অ্যাপ্রন এলাকা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল পরিষেবা এবং একাধিক ভবনও রয়েছে। 

ভূ-স্থানীয় গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ ড্যামিয়েন সাইমন প্রথমবারের মতো এই চীনা হেলিপোর্ট নির্মাণের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, হেলিপোর্টটি নির্মাণ হয়ে গেলে চীনা সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি ও উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে পারবে। অঞ্চলটিতে ঘন জঙ্গল ও এবড়োথেবড়ো পাহাড় থাকায় সামরিক রসদ আনা-নেয়া কঠিন ছিল। তবে একবার এই হেলিপোর্ট হয়ে গেলে দূরবর্তী অঞ্চলে দ্রুত সৈন্য মোতায়েন, টহল দক্ষতা জোরদার এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরবর্তী অবস্থানে চীনের সামগ্রিক সামরিক পদচিহ্ন জোরদার করবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সূত্র সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছে, চীনের গতিবিধির উপর তাদের নজর রয়েছে। চীনের হেলিপোর্ট তৈরির বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত বলে জানিয়েছেন।

হেলিপোর্টটি দুই কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় চীনা নাগরিকদের সরিয়ে এনে গ্রাম গড়ে তোলা এবং সেখান থেকে সামরিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া। হঠাৎ করে যুদ্ধ বাধলে, সেখান থেকে মোকাবিলা করা লক্ষ্য চীনের সেনাবাহিনীর।

অরুণাচল প্রদেশের কাছে যেখানে হেলিপোর্টটি তৈরি করছে চীন, সেটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ওই অঞ্চলে চীন এবং ভারতের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার সংজ্ঞা ভিন্ন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রবীণ বক্সি বলেছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।

এই হেলিপোর্ট ঘিরে ভারতের উদ্বেগের আরও একটি কারণ হলো, সীমান্তের কাছে বর্তমানে শতাধিক গ্রাম গড়ে তুলছে চীন। বিতর্কিত অঞ্চলের উপর নিজেদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতেই বেইজিংয়ের এমন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু অরুণাচলই নয়, লাদাখেও সীমান্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে ভারত ও চীনের।

/ফিরোজ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়