ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

রাশিয়ায় জন্মহার বাড়াতে অফিসের কর্মবিরতির ফাঁকে সহবাসের পরামর্শ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১২:২৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রাশিয়ায় জন্মহার বাড়াতে অফিসের কর্মবিরতির ফাঁকে সহবাসের পরামর্শ

রাশিয়ার ক্রমহ্রাসমান জন্মহার মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরকারের এক অভিনব ও বিস্ময়কর পরামর্শ দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া তাদের দেশের নাগরিকদেরকে অফিসে কর্মবিরতির ফাঁকে সহবাসের পরামর্শ দিয়েছে। মূলত, দেশটির বর্তমান প্রজনন হারকে বাড়ানোর লক্ষ্যে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে প্রতি মহিলা পিছু শিশুর জন্মহার ১.৫ নেমে এসেছে। অথচ জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় হার ২.১।

রাশিয়ার জন্মহার দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের বিষয় ছিল। দেশটির এক মিলিয়নের বেশি তরুণ নাগরিক ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব রাশিয়ার কর্মক্ষম জনসংখ্যার উপর পড়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জন্মহার কমে যাওয়াকে জাতীয় স্তরে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। জন্মহার বাড়ানোকে ‘সর্বোচ্চ জাতীয় অগ্রাধিকার’ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।  

রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েভজেনি শেস্তোপলোভ সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ার চাকরিজীবীদের বেশি বেশি করে সঙ্গম করার এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

শেস্তোপলোভের দাবি, সন্তানধারণ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যস্ততার অজুহাত দেওয়া যেতে পারে না। মানুষের উচিত কর্মক্ষেত্রে বিরতির সময় কাজে লাগিয়ে সঙ্গম করা।

কিন্তু কীভাবে ১২-১৩ ঘণ্টা ধরে কাজ করা একজন কর্মী সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করবেন? এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাত খুব একটা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। কাঁজের ফাঁকে সঙ্গমের জন্য সময় বের করাই যায়।’

জন্মহার বাড়াতে ক্রেমলিন ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন মস্কোতে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে উর্বরতা স্ক্রীনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে, যেখানে ২৪ বছরের কম বয়সী মহিলাদের প্রথম সন্তানের জন্মের পরে প্রায় ১.০২ লাখ রুবেল প্রদান করা হবে।   

রাশিয়ার সংসদ সদস্য তাতায়ানা বুটস্কায়া দাবি করেছেন, বড় পরিবারগুলো স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে উঠেছে। তিনি নিয়োগকর্তাদের তাদের কর্মীদের কত সন্তান আছে তার তালিকা তৈরি করার জন্য অনুরোধ করেছেন। 

দেশটির বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের পরামর্শ হলো- মহিলাদের তাদের কিশোর বয়সে সন্তান ধারণ করা শুরু করা উচিত।

২০২৪ সালের প্রথমার্ধে রাশিয়ার জন্মহার ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন মাসে প্রথমবারের মতো জন্মহার এক লাখের নিচে নেমে আসে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে মোট ৫,৯৯,৬০০ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬,০০০ কম।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই পরিস্থিতিকে ‘জাতির ভবিষ্যতের জন্য বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন।

তবে, জন্মহার হ্রাসের চেষ্টায় বিশ্বে রাশিয়া কেবল একাই লড়াই করছে না।  থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ একই সমস্যায় রয়েছে। দেশগুলো জন্মহার বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

/ফিরোজ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়