ঢাকা     রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৭ ১৪৩১

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ এবং রহস্যময়ী এক নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২১:০৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ এবং রহস্যময়ী এক নারী

একটি কিংবা দুটি নয়, তিনি সাতটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। ফলিত রসায়নে তার পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। তিনি আফ্রিকা ও ইউরোপে মানবিক কাজ করেছেন। বুদাপেস্টে তার অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালজুড়ে তিনি নিজেই এঁকেছেন নগ্ন ছবি।

৪৯ বছর বয়সী এই নারীর নাম ক্রিস্টিয়ানা বারসোনি-আর্সিডিয়াকোনো। হাঙ্গেরিভিত্তিক বিএসসি কনসাল্টিংয়ের মালিক তিনি। তার প্রতিষ্ঠানটিই গত সপ্তাহে লেবাননে বিস্ফোরিত হাজার হাজার পেজার তৈরি করেছিল। এই পেজারগুলো বিস্ফোরণে লেবাননে ১২ জন নিহত ও দুই হাজার মানুষ আহত হয়েছে। পেজারগুলো বিস্ফোরণের পর প্রাথমিকভাবে জানা যায়, এগুলো তাইওয়ানের পেজার কোম্পানি গোল্ড অ্যাপোলোর তৈরি এবং তাতে ওই প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম রয়েছে। অবশ্য গোল্ড অ্যাপোলো জানিয়েছে, এগুলো তাদের তৈরি নয়, হিজবুল্লাহকে যে পেজারের মডেলটি সরবরাহ করা হয়েছে তা বুদাপেস্টভিত্তিক বিএসি কনসাল্টিংয়ের তৈরি।  বিএসি কনসাল্টিংকে তাদের ব্রান্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে গোল্ড অ্যাপোলো।

তবে বিএসির প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিয়ানা বারসোনি-আর্সিডিয়াকোনো দাবি করেছেন এই পেজারগুলো তার প্রতিষ্ঠান তৈরি করেনি।

বিস্ফোরণের ঘটনার পর এনবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, ‘আমি স্রেফ মধ্যস্থতাকারী। আমার মনে হয়, আপনি বিষয়টি ভুলভাবে নিয়েছেন।’

এরপর থেকে আর জনসমক্ষে আসেননি বারসোনি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, তারা তাকে দেখেনি। বারসোনি-আর্কিডিয়াকোনো রয়টার্সের ফোনকল এবং ইমেলগুলোর জবাব দেননি। সম্প্রতি রয়টার্স বুদাপেস্ট শহরের কেন্দ্রস্থলে বারসোনির ব্যক্তিগত ঠিকানায় গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বুদাপেস্টের একটি প্রাচীন ভবনে বারসোনির ফ্ল্যাটটি। সেখানে কেউ নেই। 

শনিবার হাঙ্গেরিয়ান সরকার জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর থেকে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা বারসোনি-আর্কিডিয়াকোনোর সাথে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছে।

জাতিসংধের সাবেক ত্রাণ প্রশাসনের কর্মকর্তা কিলিয়ান ক্লিনস্মিড জানান, ২০১৯ সালে বারসোনি-আর্সিডিয়াকোনোকে হাইড্রোপনিক্স, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নের মতো বিষয়ে তিউনিসিয়ায় লিবিয়ানদের প্রশিক্ষণের জন্য ডাচ-অর্থায়নে প্রকল্প পরিচালনার জন্য ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাকে নিয়োগ করা একটি বড় ‘ভুল’ ছিল। কীভাবে কর্মীদের পরিচালনা করেছিলেন তা নিয়ে মতবিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই তাকে বরখাস্ত করা হয়।

বারসোনির বুদাপেস্টের বাড়িতে ছোট লবিটি একটি স্টিলের গেট দিয়ে আটকানো ছিল। লবির দেয়ালে নগ্ন পেইন্টিগুলো ঝুলানো ছিল। বুদাপেস্ট আর্ট ক্লাবের সদস্য হিসাবে চিত্র আঁকার চর্চা করতেন বারসোনি। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি ক্লাবে যাননি। ক্লাবের এক সদস্য রয়টার্সকে জানান, বারসোনিকে মনে হতো তিনি শিল্পীর তুলনায় অনেক বেশি ব্যবসায়ী।

২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে বারসোনি ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে তার পিএইচডি অর্জন করেন। পজিট্রনের উপর  ইলেকট্রনের ভর এবং ধনাত্মক চার্জ নিয়ে তার গবেষণা ছিল। কিন্তু কর্মজীবনে তিনি বিজ্ঞানের গণ্ডিতেই প্রবেশ করেননি।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের সাবেক অধ্যাপক আকোস তোরোক বলেন, ‘যতদূর আমি জানি তিনি ওই সময থেকে বৈজ্ঞানিক কাজ করেননি।’

বুদাপেস্টের প্রতিষ্ঠাস ক্লিনস্মিড্টের জন্য কাজ করার জন্য তিনি যে জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহার করতেন তাতে বলা হয়েছে, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এবং স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে রাজনীতি ও উন্নয়নে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। এছাড়া তিনি ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে এনজিও প্রকল্পে কাজ করেছেন।

বিএসি কনসাল্টিং ওয়েবসাইটে বারসোনি নিজেকে নিউ ইয়র্কের একটি শিক্ষামূলক এবং পরিবেশগত দাতব্য সংস্থা ‘আর্থ চাইল্ড ইনস্টিটিউটের বোর্ড সদস্য’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ডোনা গুডম্যান রয়টার্সকে বলেছেন, বারসোনি-আর্কিডিয়াকোনো এই সংস্থায় কখনো কোনো ভূমিকা পালন করেননি।

বারসোনির জীবনবৃত্তান্তে আরো দাবি করা হয়েছে, তিনি ২০০৮-২০০৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতি আণবিক শক্তি সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। তিনি একটি পারমাণবিক গবেষণা সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিলেন। তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, বারসোনি তাদের সংস্থায় আট মাস ইন্টার্ন করেছেন।
 

ঢাকা/শাহেদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়