ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সম্পর্কে ইরানের কর্মকর্তারা যা বলেছেন
ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ইসরায়েল সরকার। হামলার সময় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির আকাশসীমা। বাংকারে আশ্রয় নেন ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ইরান অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
হামলার পর পরই ইরানের এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানায়, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও আইআরজিসি কমান্ডার আব্বাস নিলফোরোশনকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অভিযানটি ইরানের আত্মরক্ষার বৈধ অধিকারের কাঠামোর মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে এবং শত্রুর যে কোনও ‘মূর্খতা’ সিদ্ধান্তমূলক এবং ধ্বংসাত্মকভাবে জবাব দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে আরেকটি বিবৃতিতে আইআরজিসি জানায়, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্য ছিল তেল আবিব এলাকায় তিনটি সামরিক ঘাঁটি। হামলায় বিমান ও রাডার ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
আইআরজিসির দাবি, তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ৯০ শতাংশ নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার তথ্যানুসারে, দেশটি ইসরায়েলে বড় আকারের সাইবার হামলাসহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রথমবারের মতো নতুন ফাতাহ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোরআনের আয়াত লিখে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের একটি ভিডিও ফুটেজ এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, ‘মাঠে আমরা জয়ী।’
আরেকটি পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘ধার্মিক ব্যক্তিদের ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে কিন্তু দিনের শেষে তারা পরাজিত হবে না।’
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের ‘নির্ধারক প্রতিক্রিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইরান যুদ্ধ চায় না।
এক্স-এ একটি পোস্টে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপটি ইরানের স্বার্থ এবং নাগরিকদের রক্ষার জন্য ছিল। নেতানিয়াহুকে জানাতে দিন যে ইরান যুদ্ধ চায় না, তবে যে কোনও হুমকির বিরুদ্ধে শক্ত জবাব দিতে পারে। ইরানের সাথে সংঘাতে জড়াবেন না।’
জাতিসংঘে ইরানের মিশন এই হামলাকে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী...ইহুদিবাদী শাসকের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আইনি, যৌক্তিক এবং বৈধ প্রতিক্রিয়া’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের ছোড়া বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। তবে দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ আঘাতে দুজন আহত হয়েছে। অন্যান্য স্থানে আরও কয়েকজন ছোটখাটো জখম হয়েছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
তবে ইরান তাদের অভিযান সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে ইরানের কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কোথাও কোথাও গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা
/ফিরোজ/