ঢাকা     রোববার   ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৮ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে আরও ৭৭ চিকিৎসকের পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ১৩ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৪:৪৮, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
পশ্চিমবঙ্গে আরও ৭৭ চিকিৎসকের পদত্যাগ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে হাসপাতালটির সাতজন জুনিয়র চিকিৎসক আজ ৯ দিন ধরে কলকাতার ধর্মতলায় অনশন করছেন ।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) আরজি করের ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক গণপদত্যাগ করেন। এদিন কলকাতা মেডিক্যাল, ন্যাশনাল মেডিকেলসহ কলকাতার বাইরের কয়েকটি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরাও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জুনিয়রদের দাবি পূরণ না হলে, তারাও ‘গণইস্তফা’ দেবেন।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার অভিযোগ তুলে বুধবার (৯ অক্টোবর) কলকাতা মেডিক্যাল থেকে ৭৫ জন সিনিয়র চিকিৎসক, ন্যাশনাল মেডিক্যাল থেকে ৩৪ জন সিনিয়র চিকিৎসক, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক ও মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে বেশ কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক ‘পদত্যাগ’ পত্রে স্বাক্ষর করেন।

আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, আজ রোববার একইভাবে ‘গণপদত্যাগ’ করলেন নদিয়ার জেএনএম হাসপাতালের ৭৭ জন সিনিয়র চিকিসক। রোববার হাসপাতালের রেজিস্ট্রারকে ইমেইল করে সিদ্ধান্তের কথা তারা জানিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে ৭৭ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে তারা আর কাজ করবেন না।

পদত্যাগপত্রে  চিকিৎসকরা লিখেছেন, ‘৯ আগস্ট আরজি করে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ১০ দফা দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা আমরণ অনশনে বসেছেন। তাদের দাবিগুলো সাধারণ মানুষের উপকারের জন্যই। অনশনরত জুনিয়রদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ক্রমশ। ওদের এই ভোগান্তি, এই যন্ত্রণা আমরা সহ্য করতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে কাজ করার মতো মানসিক অবস্থা নেই আমাদের কারও। জোর করে কাজ করলে আমাদের কাজে ভুল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীদের জীবনসঙ্কট তৈরি হতে পারে। তাই আমরা ‘গণপদত্যাগ’র সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা সোমবার থেকে কার্যকর হবে।’

জুনিয়র চিকিৎসকদের আমরণ অনশনের প্রতি সংহতি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরাকরি হাসপাতালেও কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য রোগী পরিষেবা বন্ধ থাকবে এসব হাসপাতালে।

জুনিয়রদের সমর্থনে সিনিয়র চিকিৎসকরা প্রতীকী অনশনও চালু করেছেন। ধর্মতলায় প্রতি দিন ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন করছেন কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক।

এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের ‘গণপদত্যাগ’ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন ব্যানার্জি সাংবাদিকদেরকে বলেচেন, ‘গণপদত্যাগ’ আদৌ পদত্যাগ হিসাবে গ্রাহ্য নয়। ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগ করলে তবেই তা গৃহীত হতে পারে।

জেএনএম হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক কৌস্তভ চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘রাজ্য জুড়ে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে যে থ্রেট কালচার চলছে, তার অন্যতম উদাহারণ জেএনএম হাসপাতাল। বেশ কয়েক জনকে অপসারণ করার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই থ্রেট কালচারের সিন্ডিকেটের যারা মূল মাথা, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমরা রাজ্য সরকারকে গণপদত্যাগের মধ্যে দিয়ে একটা বার্তা দিতে চাইছি। আলাপনবাবু যেভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন, সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আমরা এই ইস্তফা দিয়েছি। আমরা ওদের আশ্বস্ত করতে চাই, সরকারি হাসপাতালে চাকরি না করলেও চিকিৎসকরা না খেয়ে মরবেন না।’

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলাপন ব্যানার্জি শব্দচয়নে যে কদর্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তা নিন্দনীয়। উনার কাছে এ ধরনের ভাষা আমরা আশা করি না। উনি যে পদ্ধতিগত ইস্তফার কথা বলেছেন, সে বিষয়ে উনি যদি আমাদের একটি নির্দিষ্ট ফর্মা তৈরি করে দেন, আমরা সেই অনুযায়ী একে একে স্বাক্ষর করে ইস্তফা দেব।’ 

রঞ্জন আরও বলেন, ‘সরকারি ক্ষেত্রে ৩৫০ জন এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে আরও ৪০০ জন চিকিৎসক ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন। দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ক্ষোভ অগ্নুৎপাতের মতো বিস্ফারিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের প্রতি যে অসংবেদনশীল আচরণ করছে, তার পরিবর্তন না হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য সরকার তৈরি থাকুক।’

/ফিরোজ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়