বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের কোনো স্থান নেই: ড. ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপেদষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী নেত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য’ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ দলের এখন কোনো স্থান নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এসব মন্তব্য করেন। আজ বুধবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
পত্রিকাটি লিখেছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের এ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে তার সরকার।
ড. ইউনূস জানান, তার অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) জায়গা হবে না, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না। তারা দেশের জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তারা (রাজনৈতিক) কূটকৌশল করেছে, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো সব সময় অভিযোগ করে বলেছে, শেখ হাসিনা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা কিংবা সংস্কার করা অথবা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত বলে বিতর্ক চলছে।
ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগ ভেঙে যেতে পারে বলে তার অনুমান। তবে অন্তবর্তী সরকার তার ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, কারণ এটি ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’। আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ নির্ধারিত হবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘তাদেরকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে।’
রাজনীতিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া কিংবা রাজনৈতিক দল গঠন করার তার কোনো ইচ্ছা নেই। তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইবে সরকার।
ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনার) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের রায়ের পর আমরা ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।’
ইউনূসের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হিন্দুদের ওপর সেসকল হামলা হয়েছে তা ধর্মীয় কারণে নয় বরং তাদের আওয়ামী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে।
নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেশী, আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন, আমাদের মধ্যে অবশ্যই সেরা সম্পর্কটি থাকতে হবে যা যেকোনো প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।
/ফিরোজ/