বিবিসির বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের ফল ইউক্রেন, গাজা ও বিশ্বসংঘাতের জন্য যে বার্তা দেবে
৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সংহতি জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভের রাস্তায় হেঁটেছিলেন, তখন সতর্কতা সাইরেন বেজে উঠেছিল, যেন দূর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে।
‘আমি কিছু অনুভব করেছি... আগের চেয়ে আরও দৃঢ়ভাবে,’ বাইডেন তার কিয়েভ সফরের সেই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পরে এক অনুষ্ঠানে এমন বর্ণনা দিয়েছেন। আরও বলেছিলেন, তিনি অনুভূব করছিলেন- ‘আমেরিকা বিশ্বের জন্য একটি বাতিঘর।’
আগামী সপ্তাহের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের প্রেসিডেন্ট বাছাই করে নেওয়ার পর এই ‘বাতিঘর’ রক্ষার দায়িত্ব কে নেবেন, তা দেখার জন্য বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে।
৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হতে চলেছে, এখন চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জয়-পরাজয়ের পর বিশ্বের ওপর দেশটির সম্ভাব্য প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ হাজির করেছেন বিবিসির চিফ ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্ট লিস ডসেট।
তিনি লিখেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস কি দৃঢ়তার সঙ্গে তার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন? বাইডেনের মতো বললেন, ‘এই অস্থির সময়ে, এটা স্পষ্ট যে আমেরিকা পিছু হটতে পারে না?’ নাকি ‘আমেরিকানবাদ আগে, বিশ্ববাদ নয়’ এই আশা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ে উঠবেন?
তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি যেখানে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপতের প্রভাব প্রশ্নবিদ্ধ। আঞ্চলিক শক্তিগুলো তাদের নিজস্ব পথে চলছে, স্বৈরাচারী শাসনগুলো তাদের নিজস্ব জোট তৈরি করছে এবং গাজা, ইউক্রেন এবং অন্যত্র বিধ্বংসী যুদ্ধগুলো ওয়াশিংটনের ভূমিকার মূল্য সম্পর্কে অস্বস্তিকর প্রশ্ন উত্থাপন করছে।’
কিন্তু আমেরিকা তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং অনেক জোটে তার প্রধান ভূমিকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক ইস্যুগুলো নিয়ে খুব ভালো জানাশোনা রয়েছে- এমন কয়েকজন পর্যবেক্ষকদ বা বিশেষজ্ঝদের সঙ্গে কথা বলে লিস ডসেট জানার চেষ্টা করেছেন, এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের পর বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তার প্রভাব কেমন হতে, তার প্রতিফলন কীভাবে দেখা যেতে পারে।
সামরিক বিশ্বের গতিপ্রকৃতি কী বদলাবে?
লিস ডসেট সামরিক দিক থেকে নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য শুনেছেন।
তার মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিজক জোট ন্যাটোর প্রাক্তন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রোজ গোটেমোয়েলার। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই সতর্কতাগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারি না। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের দুঃস্বপ্ন, ন্যাটো থেকে (ইউরোপকে) সরিয়ে দেওয়ার হুমকির প্রতিধ্বনি সবার কানে বাজছে।’
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া শীর্ষ ১০ দাতা দেশ
ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা ব্যয় ন্যাটোর অন্যান্য ৩১ সদস্যের সামরিক বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ। ন্যাটোর বাইরে চীন এবং রাশিয়াসহ সামরিকভাবে শক্তিধর পরবর্তী ১০টি দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক খাতে বেশিই ব্যয় করে।
ট্রাম্প গর্ব করে বলেন, তিনি অন্যান্য ন্যাটো দেশগুলোকে তাদের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধ্য করতে ‘হার্ডবল’ খেলছেন, যা তাদের জিডিপির ২ শতাংশ। কারণ, ২০২৪ সালে মাত্র ২৩টি সদস্য দেশ এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে৷ কিন্তু তার এলোমেলো বিবৃতি এখনও (ইউরোপে) কম্পন তুলছে।
যদি কমলা হ্যারিস ভোটে জেতেন সে ক্ষেত্রে গোটেমোয়েলারের বিশ্বাস ‘ন্যাটো নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটনের ভালো (নেতার) হাতে থাকবে।’
কিন্তু সেখানেও তার একটা সতর্কতা আছে। গোটেমোয়েলার বলছেন, কমলা হয়তো ইউক্রেনে বিজয় অর্জনের জন্য ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকবেন, তবে তিনি ইউরোপের ওপর (ব্যয়) চাপ প্রয়োগ থেকে পিছপা হবেন না।
হোয়াইট হাউসের কর্ণধার হলে কমলা হ্যারিসের দলকে সিনেট বা প্রতিনিধি পরিষদের সঙ্গেই দেশ শাসন করতে হবে, অবশ্য উভয়ই শিগগির রিপাবলিকানদের হাতে চলে যেতে পারে।
রিপাবলিকানরা বিদেশি যুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে কমই ঝুঁকবেন। একটি ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে যে, যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করার জন্য কিয়েভের ওপর চাপ বাড়বে। কারণ মার্কিন আইনপ্রণেতারা বিশাল সহায়তা প্যাকেজ পাস করতে ক্রমেই অনিচ্ছুক হয়ে উঠছেন।
যাই ঘটুক না কেন, ন্যাটের সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল গোটেমোয়েলার বলছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে, ন্যাটো ভেঙে পড়বে।’ বরং ন্যাটোকেই ইউরোপে ‘নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে যেতে হবে।’
শান্তির রূপকারের স্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র?
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এমন একটি বিশ্বে কাজ করতে হবে, যেখানে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে বড় শক্তির সংঘাতের সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে।
লিস ডসেট লিখেছেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও কমফোর্ট ইরো আমাকে বলেন, ‘শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে ‘ফলপ্রসূ’ আন্তর্জাতিক অভিনেতা। তিনি অবশ্য সতর্কতাও উচ্চারণ করেছেন, বলেছেন, ‘কিন্তু বিরোধ বা দ্বন্দ্ব মীমাংসা করার শক্তি (যুক্তরাষ্ট্রের) হ্রাস পেয়েছে।’
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, যুদ্ধ শেষ করা কঠিন হয়ে উঠছে। ‘মারাত্মক সংঘাত আরও জটিল হয়ে উঠছে, বড় শক্তির প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং মধ্যম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে,’ বিষয়টি এভাবেই বর্ণনা করেছেন ইরো।
ইউক্রেনের মতো যুদ্ধগুলো একাধিক শক্তিকে টেনে এনেছে এবং সুদানের মতো সংঘর্ষগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থের সঙ্গে আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের ঢুকিয়ে নিয়েছে এবং কোনো কোনো দেশ শান্তির চেয়ে যুদ্ধে বেশি বিনিয়োগ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র নৈতিকতার যে উচ্চ আসনে ছিল, সেটি হারাচ্ছে বলে মনে করেন কমফোর্ট ইরো। তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক রাজনীতির অভিনেতারা লক্ষ্য করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিকতা ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের জন্য একটি মান বজায় রাখছে, আবার গাজায় ইসরায়েলের জন্য (হামলার ক্ষেত্রে) অন্য একটি মানে এগোচ্ছে। সুদানের যুদ্ধ ভয়ানক নৃশংসতা ঘটছে, তবে সেটিকে দ্বিতীয় স্তরের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অর্থাৎ একেক যুদ্ধের ক্ষেত্রের যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক বা নীতিগত অবস্থান একেক রকম, যা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এ অবস্থায় যদি কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেই জয় ‘বর্তমান প্রশাসনের ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করবে,’ বলেছেন কমফোর্ট ইরো।
আগুন পোহাচ্ছে বিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিরা
যদি ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হয়ে যান, তাহলে তিনি গাজার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও ইসরায়েলকে আরও মুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে পারেন। তিনি ভয়ও দেখাতে পারেন যে, কিয়েভের মাথা ডিঙিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে মস্কোর ঝামের মিটিয়ে ফেলতে পারেন।
ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস বারবার বাইডেনের ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ তত্ত্বের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের প্রতিধ্বনি তুলে গেছেন। তবে কমলা জোর দিয়ে একটি ইস্যুও তৈরি করেছেন যে, ‘নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধ করতে হবে।’
অবশ্য ট্রাম্পেরও একটি ঘোষণা রয়েছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শান্তিতে ফিরে আসার এবং মানুষ হত্যা বন্ধ করার সময় এসেছে।’ তবে তিনি ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘আপনার যা করা দরকার, তাই করুন।’
কমলার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প নিজেকে শান্তিপ্রিয় বলে গর্ব করে থাকেন। ২৭ অক্টোবর রাতে সৌদি আরবের আল আরাবিয়া টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং শিগগিরই।’
২০২০ সালে ট্রাম্প যে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ প্রস্তাব করেছিলেন, সেটি সম্প্রসারণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।
এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো ইসরায়েল এবং কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করেছে কিন্তু বৃহৎ অর্থে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বর্তমান অভূতপূর্ব সংকটে অবদান রেখেছে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস।
ইউক্রেনের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন হ্যারিস
ইউক্রেনের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের মতো শক্তিশালীদের প্রশংসা করার বিষয়টি গোপন করেন না। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চান এবং এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সামরিক ও আর্থিক সহায়তাও থামাতে চান।
‘আমি বের হয়ে যাব। আমাদের বের হতে হবে,’ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সাম্প্রতিক এক নির্বাচনি সমাবেশে জোর দিয়ে বলেছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই অবস্থানের বিপরীতে হ্যারিস বলেছেন, ‘আমি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে গর্বিত। আমি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াব এবং আমি এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিজয়ী করতে কাজ করব।’
কিন্তু কমর্ফোট ইরো উদ্বিগ্ন এই অর্থে যে, যিনি-ই নির্বাচিতই হোন না কেন, বিশ্বের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বেইজিংয়ের সঙ্গে ব্যবসা
কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা সম্ভব সমস্ত আমদানিকৃত চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত, যা নিয়ে চীন বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের অন্যতম রানা মিটার তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির লিস ডসেট লিখেছেন, চীন ও অন্যান্য অনেক ব্যবসায়ী অংশীদারের ওপর শুল্কারোপের খড়গ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ক্রমাগত হুমকিগুলোর মধ্যে একটি।
তবে ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার নিজের শক্তিশালী ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিষয়টি নিয়েও খুশি। তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডকে বলেছিলেন, বেইজিং তাইওয়ান অবরোধ করতে গেলে তাকে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে হবে না। কারণ চীনা নেতা ‘আমাকে সম্মান করেন এবং তিনি জানেন যে আমি (অভিজ্ঞ) ক্ষ্যাপাটে।’
তবে শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট- উভয় পক্ষই মনে করে, সবচেয়ে ‘ফলপ্রসূ’ প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে বেইজিং।
রানা মিটার হলেন একজন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ, যিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুলে ইউএস-এশিয়া সম্পর্ক বিষয়ে এসটি লি চেয়ারে ভূষিত।
এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প ও কমলার দলের মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখেছেন। হ্যারিসের বিষয়ে তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ‘সম্পর্কগুলো সম্ভবত একটি লিনিয়ার ফ্যাশনে গড়ে উঠবে, যেখানে তারা এখন আছে।’
ট্রাম্প জিতলে, তার ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের একটি ‘তরল দৃশ্য’ দেখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ তাইওয়ান ইস্যুতে আমেরিকা থেকে দূরবর্তী একটি দ্বীপের প্রতিরক্ষায় (ট্রাম্প) এগিয়ে আসবেন কিনা, তা নিয়ে ট্রাম্পের দ্বিমতের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন রানা মিটার।
জলবায়ু সংকট
নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বনেতাদের একটি গ্রুপ ‘এল্ডার্স’ এর চেয়ার মেরি রবিনসন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শুধু তার নাগরিকদের জন্যই নয় বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য জলবায়ু ও প্রকৃতির সংকটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রবিনসন আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ছিলেন।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো এড়াতে এবং ‘মিল্টন’ এর মতো বিধ্বংসী হারিকেনের আঘাত থেকে ভবিষ্যতের বিশ্বকে বাঁচাতে (তাপমাত্রার) একটি ডিগ্রির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ।’
কিন্তু হারিকেন মিল্টন এবং হেলেন এর চরম আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির রূদ্ররূপ দেখার পরও ট্রাম্প এই ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ মোকাবিলা করার জন্য পরিবেশগত পরিকল্পনা এবং নীতিকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে একটি’ বলে উপহাস করে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে চরম আবহাওয়া নিয়ে সতর্ক বার্তা
অনেকের আশঙ্কা, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করবেন, যেমনটি তিনি তার প্রথম মেয়াদে করেছিলেন।
যাই হোক, মেরি রবিনসন বিশ্বাস করেন- ট্রাম্প এখন জলবায়ু প্রকল্পের গতি থামাতে পারবেন না।
‘তিনি (ট্রাম্প) মার্কিন শক্তির সঞ্চালনকে থামাতে পারবেন না এবং বিলিয়ন ডলারের সবুজ ভর্তুকি ফিরিয়ে আনতে পারবেন না... বা তিনি অপ্রতিরোধ্য বিকেন্দ্রীয় জলবায়ু আন্দোলন বন্ধ করতে পারবেন না।’
জলবায়ুর বিষয়ে এখনও পুরোপুরি অবস্থান পরিষ্কার না করা কমলা হ্যারিসের প্রতিও আহ্বান রেখে রবিনসজন বলেছেন, ‘নেতৃত্ব দেখান। কাজের গতি বাড়িয়ে কার্বন নির্গমণকারীদের তা কমানোর উদ্যোগ নিতে বলার কাজে এগিয়ে আসুন।’
মানবিক নেতৃত্ব
মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অসম প্রভাবের কারণে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, শুধু সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমে নয়, বরং বৈশ্বিক মঞ্চে নৈতিক কর্তৃত্বের সাথে নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনার মাধ্যমে।’
জাতিসংঘের মানবিক-বিষয়ক ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারীর আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল ছিলেন গ্রিফিথস।
কমলা হ্যারিস জিতলে সে ক্ষেত্রে আরও বেশি আলো দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ ও একতরফাবাদ দিয়ে চিহ্নিত ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসা বৈশ্বিক অস্থিরতাকে আরও গভীর করার সুযোগ করে দেবে।’
তবে মধ্যপ্রাচ্যের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে তার ‘সংকোচ’ উল্লেখ করে বাইডেন-কমলা প্রশাসনেরও সমালোচনা করেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বারবার ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন।
কিন্তু তারা গাজা এবং লেবাননে বেসামরিক নাগরিকদের গভীর দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে আরও অনেক কিছু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার আহ্বান করলেও তাতে কোনো ফলাফল আসেনি।
বাইডেন এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তারা গাজায় ত্রাণ সহায়তা অবারিত করার ক্ষেত্রে আহ্বান রেখেছিলেন এবং মাঝে মাঝে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের অবস্থানের পার্থক্যও দেখা যেত।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, (গাজায়) সাহায্য এবং (ইসরায়েলের ওপর) চাপ কখনোই যথেষ্ট ছিল না। ইসরায়েলের জন্য সামরিক সহায়তা কিছুটা কাটছাঁট করার যে প্রস্তাব, তা নির্বাচনের পর পর্যন্ত ঠেলে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র একক বৃহত্তম দাতা। ২০২২ সালে রেকর্ড ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার দেয় দেশটি।
তেহরানের এই পোস্টারে এক দিকে ইরানের নেতারা, অন্য দিকে বাইডেন ও নেতানিয়াহু
লিস ডসেট লিখেছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থার জন্য তহবিল স্থগিত করেছিলেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেছিলেন। অন্য দাতারা শূন্যস্থান পূরণ করতে হিমশিম খেয়েছিলেন এবং এমনটিই ঘটাতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প।
তবে গ্রিফিথস এখনও বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য এখনও একটি অপরিহার্য শক্তি।
‘বিশ্বব্যাপী সংঘাত এবং অনিশ্চয়তার সময়ে বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল, নীতিগত নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উপরে উঠতে দেখতে চায়। আমরা আরও দাবি করছি, আমাদের আরো প্রাপ্য রয়েছে এবং আমরা আরও আশা করার সাহস করি,’ বলেন গ্রিফিথস।
ঢাকা/রাসেল পারভেজ