ইরানে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মানবাধিকারকর্মীর আত্মহত্যা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শাসনকে ‘স্বৈরতন্ত্র’ দাবি করে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দেশটির সুপরিচিত মানবাধিকারকর্মী কিয়ানোশ সানজারি আত্মহত্যা করেছেন। খবর বিবিসির।
মৃত্যুর আগে কিয়ানোশ সানজারি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন। ওই পোস্টে তিনি জানান, বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার মাঝে চারজন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি না দিলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এর ঘণ্টাখানেক পরেই তার সহকর্মীরা জানান, সানজারি মারা গেছেন।
পোস্টে সানজারি আরও লিখেন, ‘কারো মতপ্রকাশের জন্য তাকে বন্দি করা উচিত নয়। প্রতিবাদ করা প্রতিটি ইরানি নাগরিকের অধিকার। আমি আশা করছি, ‘একদিন ইরানিরা জেগে উঠবে’ এবং ‘দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসবে।’
পুলিশ হেফাজতে ইরানি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানজুড়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছিল। সেই বিক্ষোভে সমর্থন জানানো এবং বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সানজারি ইরানের নেতাদের একজন সোচ্চার সমালোচক এবং গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে রাজনৈতিক সক্রিয়তার জন্য সানজারিকে বারবার গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে তিনি ইরান ছেড়ে নরওয়েতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকার পার্সিয়ান বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার জন্য ইরানে ফেরত আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও দেশটির ইভিন কারাগারে ১১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তবে ২০১৯ সালে তিনি চিকিৎসার কারণে জামিনে মুক্তি পান।
সে সময় তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল, একটি বিছানায় শিকলবন্দী করা হয়েছিল এবং তার শরীরে বিভিন্ন পদার্থ ইনজেক্ট করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা মানবাধিকারকর্মী হোসেইন রোনাগি বলেছেন, ‘কিয়ানোশ সানজারি শুধু একটি নাম নয়। এটি বছরের পর বছর ধরে চলমান দুর্দশা, প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক।’
ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবর বলছে, সানজারির মৃত্যু ফ্রান্সের লিওনে ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ মোরাদির আত্মহত্যার প্রতিধ্বনি। ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মোরাদি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আত্মহত্যা করেছিলেন।
ঢাকা/ফিরোজ