মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মুসলিম নাগরিক অধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছ তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে জরুরিভিত্তিতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য গতমাসে ইসরায়েলকে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যথায় সামরিক সহায়তায় কাটছাঁট করা হবে বলে জানায় ওয়াশিংটন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার সেই কথা রাখেননি।
মার্কিন-নির্দেশিত সময়সীমা ইসরায়েল পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও, দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে গতকাল বুধবার ‘যুদ্ধাপরাধী’ ঘোষণা করে সিএআইআর।
সংস্থাটি জো বাইডেনকে উদ্দেশ্যে করে কঠোর ভাষায় একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধাপরাধের অর্থায়ন আপনাকে যুদ্ধাপরাধী করে তোলে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজায় ভয়াবহ ক্ষুধা বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ৩০ দিনের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল, তা লঙ্ঘন করার পরেও ইসরায়েলি সরকারকে বেআইনিভাবে প্রাণঘাতি অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
গত ১৩ অক্টোবর মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েল সরকারের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে ৩০ দিনের মধ্যে গাজার মানবিক অবস্থার উন্নতি করতে বা পরিণতির মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি জানায়। যার মধ্যে ছিল গাজায় প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫০টি মানবিক সাহায্য ট্রাকের প্রবেশাধিকার ও ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
গাজার মানবিক সঙ্কট কমানোর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ইসরায়েলের ব্যর্থতা সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত মঙ্গলবার বলেছে, এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত কোনো পরিবর্তন নেই।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ‘আমরা, এই সময়ে, ইসরায়েল মার্কিন আইন লঙ্ঘন করছে এমন একটি মূল্যায়ন করিনি।’
আনেরা, অক্সফামসহ আন্তর্জাতিক আটটি মানবিক সহায়তা সংস্থা গত মঙ্গলবার এক রিপোর্টে বলেছে, ইসরায়েল কেবল মানবাধিকারের মার্কিন মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থই হয়নি, বরং একই সাথে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা গাজার মানবিক সংকটকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাঁধায় কোনও ধরনের খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়নি এবং সেখানে ৪ লাখ ফিলিস্তিনির বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও অন্যান্য সরঞ্জাম শেষ হয়ে গেছে।
টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় অবরোধ জারি করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ইতিমধ্যে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত রাখতে মার্কিন সরবরাহকৃত বিমান, গাইডেড বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও শেলগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিপক্ষে ইসরায়েলের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে। গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাইডেন প্রশাসন।
ঢাকা/ফিরোজ