গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর আদানির জন্য আরও দুঃসংবাদ
আদানি শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারপারসন গৌতম আদানি
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির জন্য আরও দুঃসংবাদ এসেছে; কেনিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও শেয়ারবাজারে ধসের মুখে পড়েছে তার কোম্পানি।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ঘুষ ও প্রতারণার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি পর কেনিয়া সরকার আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি একটি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা কেনিয়া সরকার।
রয়টার্সের কয়েকটি প্রতিবেদেন এসব তথ্য জানিয়ে আরও বলা হয়েছে, অর্থায়ন নিয়েও সমস্যার মুখে পড়েছে আদানি গ্রুপ। নতুন ঋণ না দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে ব্যাংকগুলো।
দুঃসংবাদের মধ্যে আরও রয়েছে, আদানি গ্রুপের জারি করা সব বন্ড শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের জন্যও নিম্নমুখী রয়েছে; অবশ্য বৃহস্পতিবার ধসের পর কিছু শেয়ার স্থিতিশীল হয়েছিল।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী আদানি শিল্প গোষ্ঠীর চেয়ারপারসন গৌতম আদানি। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীকে অভিযুক্ত করার পর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
রয়টার্স লিখেছে, আদানির সঙ্গে তার ভাতিজা সাগর আদানির বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।
আদানি শিল্পগোষ্ঠী
এনডিটিভি বলছে, আদানি গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিদের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে। পাশাপাশি তারা ‘সম্ভাব্য সব আইনি ব্যবস্থা’ অবলম্বন করার ঘোষণা দিয়েছে।
আদানিকে নতুন ঋণ দেওয়া বন্ধের আভাস
রয়টার্স লিখেছে, কিছু বৈশ্বিক ব্যাংক সাময়িকভাবে আদানি গ্রুপকে নতুন ঋণ দেওয়া বন্ধ করারও কথা ভাবছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়ের পরও চলমান ঋণ থেকে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে ইতিবাচক রয়েছে ব্যাংকগুলো।
আদানির দুটি বৈশ্বিক কোম্পানির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার পর আর্থিক অবস্থার ওপর প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য কয়েকটি ব্যাংক থেকে তাদের কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে বৈঠক করারও আহ্বান জানিয়েছে ব্যাংকগুলো।
গবেষণা সংস্থা ‘ক্রেডিটসাইটস’ বলছে, আদানি গ্রুপের ‘গ্রিন এনার্জি’ ব্যবসায় পুনঃঅর্থায়ের বিষয়টি নিয়ে ভাবছে ব্যাংকগুলো, যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে গ্রুপটির অদূর ভবিষ্যতের উদ্যোগে।
রেটিং এজেন্সি এসএন্ডপিও একটি বিবৃতিতে সতর্ক করেছে যে, গ্রুপটির বৃহৎ প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনার কারণে ইক্যুইটি এবং ঋণ বাজারে নিয়মিত প্রবেশের প্রয়োজন হবে; তবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমতে পারে।
বিবৃতিতে এসঅ্যান্ডপিও বলেছে, “আমরা বিশ্বাস করি দেশীয়, সেইঙ্গে কিছু আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং বন্ড মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা আদানির কোম্পানিগুলোকে একটি বৃহৎ গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের সার্বিক পরিস্থিতি ও উপস্থিতির ওপর তাদের ব্যবসার প্রসার নির্ভর করে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, গৌতম আদানি এবং তার সাতজন সহযোগী আগামী ২০ বছরের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার লাভের টার্গেট নিয়ে ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়নের কাজ পেতে দেশটির কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে রাজি হয়েছেন।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে আদানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন
আদানির সঙ্গে কেনিয়ার চুক্তি বাতিল
বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময় কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো আদানি গ্রুপের সঙ্গে দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেন।
রয়টার্স লিখেছে, দুটির মধ্যে একটি চুক্তির অর্থমূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই চুক্তি অনুযায়ী, কেনিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে করার কথা ছিল আদানির। সেই সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি লিজের আওতায় বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল উন্নত করার কথা ছিল।
পার্লামেন্টে রুটোর ঘোষণা অনুযায়ী, আদানির সঙ্গে আরেকটি ৩০ বছর মেয়াদি ৭৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব (পিপিপি) চুক্তি বাতিল করেছে কেনিয়া।
আদানি গোষ্ঠীর একটি কোম্পানি গত মাসেই কেনিয়ার জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য ৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের চুক্তিটি করেছিলেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পার্লামেন্টে করতালির ঝড় ওঠে এবং তাদের উচ্ছ্বাস করতে দেখা যায়।
কেনিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর সেটি নিয়ে আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে তাদের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে খুশি ছিলেন না দেশটির মানুষ। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা-বিতর্ক ছিল কেনিয়ায়।
ঢাকা/রাসেল