ইমরান খানের সমর্থকদের কবল থেকে ইসলামাবাদ ‘পুনরুদ্ধার’ হলো যেভাবে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তিসহ ৪ দফা দাবিতে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ‘চূড়ান্ত’বিক্ষোভে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল রাজধানী ইসলামাবাদ। পিটিআই গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীতে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেয়। সারাদেশ থেকে পিটিআইয়ের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর প্রবেশ ঠেকাতে রাজধানী ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার।
বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজধানীর সব প্রবেশপথ। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত। মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। তবে এতসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ইসলামাবাদে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ আটকাতে পারছিল না সরকার। গত সপ্তাহান্ত থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ইসলামাবাদে উপস্থিত হন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে পিটিআইয়ের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৬ জন সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানের ২৪৫ ধারা সক্রিয় করে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।
তবে বিক্ষোভকারীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইসলামাবাদের রেড জোন যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন অবস্থিত সেদিকে বিক্ষোভের জন্য এগোতে থাকেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি পিটিআইয়ের নেতাকর্মীদেরকে তাদের মিছিল থামাতে বলেন। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বেলারুশের প্রেসিডেন্ট ইসলামাবাদে রয়েছেন, তাই রেড লাইন অতিক্রম করবেন না। অন্যথায়, আমরা চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”
তবে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুরের নেতৃত্বে হাজার হাজার পিটিআই কর্মী নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ইসলামাবাদের রেড জোনের প্রবেশমুখে পৌঁছে যায়। সেখানে প্রায় ১০ হাজার প্রতিবাদকারীর মুখোমুখি হয় ২০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী। এসময় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল লাঠি ও গুলতি। তারা সড়কে স্থাপিত কনটেইনার দিয়ে তৈরি রোডব্লকে অগ্নিসংযোগ করেন।
এরপর কঠোর অবস্থানে যায় পাকিস্তান সরকার। রেড জোন থেকে কয়েক মিটার দূরে এক্সপ্রেস চৌক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাত ৮ টার পরে বিশাল অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। ব্যাপক ধরপাকড় মুখে ও লাঠিচার্জের মুখে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় পিটিআই। দলটি সমর্থকদের ‘ঘরে ফিরতে, নৈশভোজ করতে এবং আগামীকাল ফিরে আসার’ আহ্বান জানায়। গভীর রাতের বুশরা বিবি এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুরসহ পিটিআই নেতারা পশ্চাদপসরণ করেন।
কঠোর অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ইসলামাবাদের কেন্দ্রে সরকারি কার্যালয় অভিমুখী (রেড জোন) সড়ক থেকে ইমরান খানের সমর্থকদের সরিয়ে দিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। রেড জোনের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী।
চারদিন ধরে চলা লকডাউন ও সংঘর্ষের পর, আজ বুধবার সকালে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি ঘোষণা করেন, ইসলামাবাদ থেকে প্রতিবাদকারীদের পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সড়কগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।
পিটিআই জানিয়েছে, তারা সাময়িকভাবে প্রতিবাদ স্থগিত করেছে। পেশোয়ারের পিটিআই সভাপতি মোহাম্মদ আসিম জানিয়েছেন, ভবিষ্যৎ কৌশল পরে নির্ধারণ করা হবে।
তথ্যসূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, আল জাজিরা