ঢাকা     বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৯ ১৪৩১

মধ্যরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘ওলটপালট’ অবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:২৭, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০০:২৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
মধ্যরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘ওলটপালট’ অবস্থা

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজপথে নেমেছে লাখো মানুষ

কোনো আগাম বার্তা ছাড়াই মধ্যরাতে হঠাৎ দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসন জারির ঘোষণা আসার পরই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। পথে পথে সেনা ট্যাঙ্ক মেনেছে, পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ফেলেছে তারা। বিক্ষোভ নিয়ে সেনাদের রুখে দিতে রাজপথে নেমেছে লাখো মানুষ।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ১১টায় বিবিসির সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী সিউলে সেনাবাহিনীর পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে রাখার মধ্যেই সেখানে প্রবেশ করেন আইনপ্রণেতারা। সরকারি ও বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা সামরিক শাসনের আদেশ আটকে দিতে সম্মত হয়েছেন। তারা এখনও পার্লামেন্ট ভবনের মধ্যে অবস্থান করছেন।

বিবিসি লিখেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায় পার্লামেন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে আইনপ্রণেতাদের। তারা এরইমধ্যে প্রেসিডেন্টের সামরিক শাসন জারির আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে সেটি আটকে দিয়েছেন। তবে তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না; কেননা আবার যদি প্রেসিডেন্ট কিছু করে ফেলেন।

আরো পড়ুন:

এর ঘণ্টাখানেক আগে রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মার্শাল ল’ জারি করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়োন সাক ইয়োল। ঘোষণায় বলা হয়, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ঘোষণায় তিনি বলেন, একই সঙ্গে দেশের ভেতরে ‘রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা’ বা ‘রাষ্ট্রবিরোধী পায়তারা’ বন্ধের জন্য সামরিক শাসন জারি করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ইয়োলের ঘোষণার বিরুদ্ধে পথে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। পার্লামেন্ট ভবনের সামনে দেখা যায় হাজারো নাগরিককে। সেখানে তাদের ‘মার্শাল ল’ এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায়।

একজন বিরোধী নেতা আইনপ্রণেতাদেরক ‘মার্শাল ল’ জারির আদেশ আটকে দেওয়ার জন্য সংসদে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানালে তারা সবাই পার্লামেন্টে আসেন। সরকারি ও বিরোধী দল থেকে পার্লামেন্ট উপস্থিত ১৯০ জন সদস্যই প্রেসিডেন্ট আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে সেখানেই অবস্থান নেন। 

মার্শাল ল জারি মানে জরুরি অবস্থা জারি করা এবং সব কিছু সামরিক কর্তৃপক্ষের শাসনে চলা। এর অর্থ স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার স্থগিত করা এবং সর্বাত্মক সামরিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।

প্রেসিডেন্ট ইয়োলের দল ‘পিপল পাওয়ার পার্টি’ এবং বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি আগামী বছরের ‘বাজেট বিল’ নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট মার্শাল ল জারি করলেন।

কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ লিখেছে, প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর পার্লামেন্টে ঢুকে পড়া সৈনিকরা পার্লামেন্ট ভবনের ভেতর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্পিকার।

তবে দেশটির সামরিক বাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হলেই হবে না, যতক্ষণ প্রেসিডেন্ট তার ঘোষণা প্রত্যাহার না করছেন ততক্ষণ তারা সামরিক আইন বলবৎ রাখবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সেদেশে সতর্কভাবে চলাফেলার পরামর্শ দিয়েছে। বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের দেশের নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

কেন এই পরিস্থিতি

বিবিসি লিখেছে, অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ সামরিক শাসন জারির ঘোষণায় নাগরিক হকচকিত হয়ে পড়ে। তবে এর পেছনে রাজনৈতিক অনৈক্যের চাপ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিবিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইয়োলের ঘোষণা শুনে নাগরিকরা চট করে ভেবে নিয়েছিল যে, এটি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় হবে। পারমাণবিক অস্ত্র বা সন্ত্রাসবাদজাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির মতো কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। অথবা অভ্যুত্থানের মতো কোনো ঘটনা।

যাইহোক, দ্রুতই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, প্রেসিডেন্ট ইয়োল এই কঠোর পদক্ষেপটি নিয়েছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়।

চলতি বছরের বছরের শুরুতে পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ হারায় প্রেসিডেন্টে দল পিপল পাওয়ার পার্টি। সরকারি দল বিল পাস করাতে বিরোধীদের বাধার মুখে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে। এতে ইয়োলের শাসন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রেসিডেন্ট এখন একটি অগণতান্ত্রিক কৌশল নিয়ে এগোতে যাচ্ছেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিরোধী নেতারা অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে অসাংবিধানিক বলে বর্ণনা করে এই পদক্ষেপের নিন্দা করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দলের নেতা লি জায়ে-মিয়ং তার ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপিদের মঙ্গলবার রাতে সংসদে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। 

এরই মধ্যে সিউলের রাস্তায় রাস্তায় সেনা-পুলিশ নেমে যায় এবং তাদের গাড়িগুলো টহল শুরু করে, নাগরিকদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে।

তারপরও বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে ছুটে এসেন; প্রতিবাদ করেন এবং স্লোগান তোলেন- ‘কোনো সামরিক আইন চলবে না’। 

এ সময় পার্লামেন্ট ভবনের পাহারায় থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।

সামরিক শাসন কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?

সামরিক শাসন হলো জরুরি অবস্থায় সামরিক কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী এক শাসন ব্যবস্থা। ধরে নেওয়া হয়, বেসামরিক কর্তৃপক্ষ দেশ চালাতে ব্যর্থ, তাই তাদের সরিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে।

শেষবার দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসন জারি হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, যখন একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৮৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর থেকে আর কখনও দেশটিতে এমন সামরিক অবস্থা আসেনি। 

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়