রাশিয়া না ইরান, কোথায় পালিয়ে গেলেন বাশার?
রাশিয়া না ইরান, কোথায় পালিয়ে গেলেন বাশার?
বিদ্রোহীদের অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের মুখে শনিবার গভীর রাতে দামেস্ক থেকে ব্যক্তিগত বিমানে করে পালিয়ে গেছেন সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ। এক বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সিরীয়বাসীর মধ্যে, কোথায় গেলেন বাশার। প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও উঠেছে।
শনিবার গভীর রাতে সিরিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসক বাশার পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে দামেস্কের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তাদের উল্লাস করতে দেখা যায়। সশস্ত্র বিদ্রোহীরা পুরো দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
তাহলে তাড়া খেয়ে কোথায় পালিয়ে গেছেন বাশার আল-আসাদ? বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক কোনো দেশে তার আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ খুবই ক্ষীণ। তাহলে কোনো দেশে যেতে পারেন?
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকজন বিশ্লেষক বলছেন, দুটি দেশ আছে, যেখানে বাশার আল-আসাদ যেতে পারেন। প্রথমত ইরানের নাম আসছে। কারণ, সিরিয়ার খুব কাছাকাছি দেশ ইরান। আর ইরানই বছরের পর বছর বাশারকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
দ্বিতীয় দেশ হিসেবে নাম আসছে রাশিয়ার। সেদেশে চলে যেতে পারেন বাশার আল-আসাদ। কারণ, বাশারের এত দিন ক্ষমতায় থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে বাশারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হতে পারে রাশিয়া।
তবে বাশার আল-আসাদ ঠিক কোনো দেশে পালিয়ে গেছেন, তা নিয়ে কঠিক কোনো তথ্য এখনও অধরা রইয়ে গেছে। শিগগির হয়তো সেই খবরও চলে আসবে।
সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুর
ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা এ তথ্য জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে ইরনা বলেছে, দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে বেশ কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
আল জাজিরার খবর বলছে, ঘটনার ফুটেজে দূতাবাসের ভিতরে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখা গেছে। ইরানের কাশেম সোলেইমানি এবং হিজবুল্লাহর হাসান নাসরুল্লাহসহ নিহত নেতাদের ছেঁড়া ছবি দেখা গেছে।
এদিকে ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনার পর, ইরাক দামেস্কে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে।
ইরাকের সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার রাজধানীতে ইরাকি দূতাবাস ভবনটি খালি করা হয়েছে এবং কর্মীদের লেবাননে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বাশার পতনের মাস্টারমাইন্ড কে এই জোলানি
সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। তাকেই আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ গত কয়েক বছরে বেশ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায়। তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। ঠাৎই গত ১২ দিনের ঝড়ে উল্টে গেল বাশার আল-আসাদের মসনদ।রবিবার (৮ ডিসেম্বর) বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়তেই অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রাজধানী ত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট।
এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দীর্ঘ ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। পতন হয় বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গত ২৭ নভেম্বর আকস্মিকভাবে আলেপ্পো দখল অভিযান শুরু করে।
এরপর অপ্রতিরোধ্য গতিতে হামা, দারা, হোমস ও রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেন তারা। তাদের মাত্র ১২ দিনের দ্রুত গতির অভিযান বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।
সিরিয়ায় এই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। তার প্রকৃত নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। তার বাবা ছিলেন একজন পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী। ১৯৮৯ সালে সিরিয়ায় ফিরে এসে দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে তার পরিবার।
২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে পাড়ি দিয়ে আল-কায়েদায় যোগ দেন আল-জোলানি। ওই বছরই ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৬ সালে জোলানিকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ছাড়া পান। এরপর তার নেতৃত্বে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত।
প্রথম দিকের কয়েক বছর জোলানি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে কাজ করেন। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন বাগদাদি। এরপর জোলানি সিরিয়ায় নিজের প্রতিষ্ঠিত আল-কায়েদা শাখার তৎপরতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। ওই সময়টাতে জোলানি আল-নুসরা ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে জাভাত ফাতেহ আল-শাম রাখেন। পরে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শামের সমন্বয়ে এইচটিএস গঠন করেন জোলানি।
গোষ্ঠীটিকে প্রেসিডেন্ট আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রাণঘাতী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আজ রবিবার আসাদ সরকারের ২৪ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটানোর পর এইচটিএস এক বিবৃতিতে প্রতিশোধ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে সিরিয়ায় ‘নতুন যুগের সূচনা’ ঘোষণা করেছে।
সশস্ত্র বিরোধী দলটি বলেছে, ‘নতুন সিরিয়া; হবে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ স্থান, যেখানে ন্যায়বিচারের জয় হবে এবং সমস্ত সিরিয়ানদের মর্যাদা রক্ষা করা হবে।
সিরিয়ায় নজিরবিহীন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র
২৪ বছর ধরে সিরিয়ার ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সশস্ত্র বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে বিমান করে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গেছেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে নাটকীয় পরিস্থিতি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সিরিয়া পরিস্থিতির দিকে যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে নজর রাখছে বলে হোয়াইট হাউজ বিবৃতি দিয়েছে। আজ রবিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার নজিরবিহীন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার দল সিরিয়ার নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে এ বিষয়ে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছে।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় ‘নতুন যুগের সূচনা’ ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীরা।
সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পতন যে কারণে আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়
সিরিয়ার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। সর্বশেষ রাজধানী দামেস্কের দিকে বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার পথে প্রতিরক্ষা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। সামরিক বাহিনীর বড় ধরনের প্রতিরোধ ছাড়ই আজ রবিবার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেন।
এ প্রসঙ্গে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ও সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ফেলো জেমস ডরসি বলেন, “ এ ঘটনা আমাদের সহজভাবে দেখায় যে, আল-আসাদ সরকারের সমর্থন কতটা ভঙ্গুর ছিল এবং সিরিয়ার সামরিক বাহিনী কতটা ভঙ্গুর ছিল।”
তিনি বলেন, “যদি শাসনকে রক্ষা করার জন্য আপনার কাছে একটি জাতীয় সামরিক বাহিনী না থাকে, তাহলে ইরান বা রাশিয়ার সহযোগিতা প্রকৃত অর্থে আপনার শাসন ক্ষমতাকে ধরে রাখতে তেমন কিছু করতে পারবে না।”
তার মতে, বিদ্রোহীদের দমন করার লক্ষে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিপুল সংখ্যক মানুষজনকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। তাদেরকে প্রায়শই সঠিকভাবে অর্থ প্রদান করা হয় না এবং সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। সুতরাং তারা শেষ পর্যন্ত প্রাণপণ লড়াই করে যাবে বা তাদের প্রয়োজন পূরণ করে না এমন একটি শাসনব্যবস্থার জন্য তাদের জীবনকে রাখবে না, এটা সত্যিই বিস্ময়কর নয়।”
নতুন নেতৃত্বকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি পালিয়ে যাননি।
তিনি দামেস্কে তার বাড়িতেই থাকছেন এবং পালিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন।
সোশ্যল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি বলেছেন, তিনি দামেস্কে রয়েছেন এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত যেকোনো নেতৃত্বকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিরিয়া একটি স্বাভাবিক দেশ হতে পারে, যেটি তার প্রতিবেশী এবং বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।”
এর আগে টেলিগ্রামে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী আপাতত সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবেন।
এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি টেলিগ্রামে ঘোষণা করেছেন, শহরের সামরিক বাহিনীর জন্য দামেস্কের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে।
সিরিয়ায় বাশারের পতন ঘটাল যে বিদ্রোহীরা
পতন ঘটে গেছে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের। ইসলামী যোদ্ধারা বজ্রপাতের মতো শক্তিশালী আক্রমণের মধ্য দিয়ে তার সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে দখল করে নিয়েছে রাজধানী দামেস্ক। আর প্রাণ বাঁচাতে পরিবার নিয়ে বিমানে করে পালিয়েছে গেছেন বাশার আল আসাদ। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের অবসান হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কর সব ভবন, স্থাপনা, রেডিও-টিভি, কারাগার সব দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী।
২০১১ সালে জর্ডান সীমান্তের কাছে দক্ষিণ সিরিয়ার ডেরা অঞ্চলে যে বিদ্রোহের শুরু হয়েছিল ১৩ বছর পর তার সমাপ্তি হলো।
এখন প্র্রশ্ন হলো- কারা এই বিদ্রোহী? জেনে নেওয়া যাক এক পলকে।
৮ ডিসেম্বর বাশার পতনের আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম নামে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা দুর্ধর্ষ, মারকুটে এবং ভয়ানক হিংস্র।
২০১১ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সরাসরি সহযোগী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছিল হায়াত আল তাহরির আল-শাম। বিদ্রোহী ও জঙ্গি নেতা হিসেবে পরিচিত জাভাত আল-নুসরার নেতৃত্ব জন্ম নেওয়া আল-শাম।
জানেন কি? দুনিয়া কাঁপানো জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদীও আল-শামের জন্মলগ্নে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মোটামুটি এত এত জঙ্গি নেতার সমন্বয় থাকার কারণে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর এবং মারাত্মক সংগঠন হয়ে ওঠে এই হায়াত তাহরির আল-শাম।
এই সংগঠনটি মূলত আলাদা একটি নামে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে। ওই সময় এই গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আল-কায়দার মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে। তখন তারা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন একটি সংগঠন গড়ে তোলে, যার নাম দেওয়া হয় হায়াত তাহরির আল-শাম। তখন তারা বিপ্লবী মতবাদ পরিহার করে জিহাদি মতবাদকে চালিকা শক্তি বানায়।
২০১৬ সালে হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানি আরও কিছু ছোট ছোট বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে তাদের সংগঠনের ভেড়ান। তারা সিরিয়ার ইদবিল প্রদেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কিছু সময়ের জন্য সেখানে তারা শাসন পরিচালনা করে, যা নানাভাবে কলঙ্কিত হয়ে পড়ে।
অবশ্য হাল ছাড়েনি হায়াত তাহরির আল-শাম। আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর তারা বিপ্লবের পথ ছেড়ে সিরিয়ায় খিলাফতের পরিবর্তে কঠোর ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এটি সিরিয়ায় সংঘাত বাড়ায় এবং ধীরে ধীরে তারা শক্তি বাড়াতে থাকে। সেই ধারায় এখন তারা দামেস্ক দখল করল।
‘সিরিয়া আপনার জন্য অপেক্ষা করছে’
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটনার পর বিদ্রোহী যোদ্ধারা প্রবাসী সিরিয়ানদের দেশে ফিরে এসে স্বাধীনতা উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছে।
আজ জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, কয়েক দশক ধরে আসাদ সরকারের দমন-পীড়নের কারণে দেশ ছেড়ে যাওয়া লাখ লাখ সিরিয়দের উদ্দেশ্যে বিদ্রোহী যোদ্ধারা বলেছে, ‘সিরিয়া আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।’
বিদ্রোহীরা সিরিয়ার সরকারের পতনকে ‘দশকের পর দশক ধরে বেদনা ও যন্ত্রণার পর স্বাধীনতার মুহূর্ত’ হিসাবে স্বাগত জানিয়েছে।
সশস্ত্র বিরোধীরা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সারা বিশ্বের বিদেশি সিরিয়ানদের বলছি, সিরিয়া আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
প্রতিশোধ না নেওয়ার ঘোষণা বিদ্রোহীদের
সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের ২৩ বছরের শাসনের পতন ঘটেছে। আজ রবিবার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেন।
সশস্ত্র বিরোধী দল প্রতিশোধ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ‘নতুন সিরিয়া’ হবে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ স্থান, যেখানে ন্যায়বিচারের জয় হবে এবং সব সিরিয়ানদের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। খবর আল জাজিরার।
বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা অন্ধকার অতীতের পাতা উল্টে দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করি।’
এইচটিএস প্রধান আল-জুলানিসহ বিরোধী নেতারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তারা সাম্প্রদায়িকতা এবং আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের আগের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ দূর করে সব সিরিয়ানদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্য রাখে।
অত্যাচারী আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন, সিরিয়া মুক্ত: দাবি বিদ্রোহীদের
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। সিরিয়া এখন মুক্ত। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আজ রবিবার টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যাচারী শাসক বাশার আল-আসাদ পালিয়েছেন।
টেলিগ্রামে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা দামেস্ককে (সিরিয়ার রাজধানী) অত্যাচারী বাশার আল-আসাদের হাত থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি। সিরিয়া এখন মুক্ত। একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। একটি নতুন যুগের সূচনা হলো।”
এইচটিএস আরো বলেছে, “বাশার আল-আসাদ পরিবারের অর্ধশতাব্দীর শাসনামলে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বা কারাবন্দী হয়েছেন, তারা এখন নিজ নিজ ঘরে ফিরতে পারবেন। এটি হবে একটি নতুন সিরিয়া, যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবেন। এই সিরিয়ায় ন্যায়বিচারের জয় হবে।”
টেলিগ্রামে পৃথক আরেকটি পোস্টে এইচটিএস বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আপাতত সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবেন।
এইচটিএস এক ঘোষণায় বলেছে, শহরের সামরিক বাহিনীর জন্য দামেস্কের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের’ কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ।
সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচএস) জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কে সিরিয়ান সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে তাদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলতে দেখা গেছে, কারণ তাদের বলা হয়েছে, সরকার পতনের কারণে তারা চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। গত ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল অভিযান শুরু করে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে তারা মাত্র ১২ দিনে রাজধানী দামেস্কে পৌঁছে যায়। প্রেসিডেন্ট আসাদ বিমানে করে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ