ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান: ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, “এই সংঘাত ‘উন্মাদনা’ ছাড়া আর কিছু নয়।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার (৭ ডিসেম্বর) প্যারিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়েছে। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভের পর ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির এটিই প্রথম মুখিমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই ইউক্রেনে ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনার আহ্বান জানান ট্রাম্প।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে চান এবং এই উন্মাদনা বন্ধ করতে চান। কিয়েভ এরই মধ্যে অনেক সৈন্য হারিয়েছে। এখানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত, সেজন্য আলোচনা শুরু করা উচিত।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি ভ্লাদিমিরকে (পুতিন) ভালো করে জানি। এটি তার কাজ করার সময়। চীন সাহায্য করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় রয়েছে!”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রবিবার ট্রাম্পের পোস্টের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “শান্তি কেবল কাগজের লিখিত নয়, বরং গ্যারান্টি দরকার।”
এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “যখন আমরা রাশিয়ার সঙ্গে কার্যকর শান্তির কথা বলি, তখন আমাদের অবশ্যই প্রথমে শান্তির জন্য কার্যকর গ্যারান্টি সম্পর্কে কথা বলতে হবে। ইউক্রেনীয়রা অন্য কারো চেয়ে শান্তি চায়।”
পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “এটি (যুদ্ধ) কেবল একটি কাগজের টুকরো এবং কয়েকটি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হতে পারে না। গ্যারান্টি ছাড়াই যুদ্ধবিরতি যেকোনো মুহুর্তে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে, যেমন পুতিন ইতিমধ্যেই করেছেন। ইউক্রেনীয়রা যাতে আর ক্ষতির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই গ্যারান্টি দিতে হবে।”
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের আহ্বান ৪ লাখ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হতে পারে। শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন যে, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের ৪৩ হাজার সৈন্য নিহত এবং ৩ লাখ ৭০ হাজার সৈন্য আহত হয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রবিবার মস্কোতে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, “রাশিয়া সবসময়ই আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে আলোচনা ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে হতে হবে।”
রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, “ইস্তাম্বুলে আলোচনায় যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় আলোচকদের মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়েছিল, যা কখনও বাস্তবায়িত হয়নি, ভবিষ্যতে আলোচনার ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে।”
পেসকভ বলেন, “ইউক্রেনের বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুপরিচিত। শত্রুতা অবিলম্বে বন্ধ করার শর্তগুলো প্রেসিডেন্ট পুতিন এ বছরের জুনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া বিবৃতিতে নির্ধারণ করেছিলেন। এটি স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউক্রেন আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং এখনও তা অব্যাহত রেখেছে।”
গত জুনে পুতিন তার শর্তে বলেছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে এবং শান্তি চুক্তি করার জন্য রাশিয়াকে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে। রুশ সৈন্যরা বর্তমানে ওই অঞ্চলগুলো আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ উল্লেখ করেন, জেলেনস্কি একটি বিশেষ ডিক্রির মাধ্যমে রাশিয়ান নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করেছিলেন। আলোচনা এগিয়ে যেতে হলে সেটি প্রত্যাহার করতে হবে।
ঢাকা/ফিরোজ