ঢাকা     রোববার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩১

ভারতে মসজিদ জরিপ ইস্যুতে সংসদে সরব আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪  
ভারতে মসজিদ জরিপ ইস্যুতে সংসদে সরব আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

ভারতে ধর্মীয় উপসনালয় জরিপের নাম করে আইন ভেঙে যেভাবে একের পর এক মসজিদ ভাঙা হচ্ছে, তা নিয়ে এবার দেশটির সংসদে সরব হলেন অল ইন্ডিয়া মজলিম-ই-ইত্তেহাদ-উল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। শনিবার এই বিষয়টি নিয়ে লোকসভার অধিবেশনে নিজের বক্তব্য পেশ করেন তিনি।

রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে সংবিধান প্রণয়নের ৭৫তম বর্ষ পালন উপলক্ষে শনিবার লোকসভায় নিজের বক্তব্য দেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। এ সময় হায়দ্ররাবাদের এই এমপি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি ‘কেড়ে নেওয়ার’ অভিযোগ তোলেন।

আরো পড়ুন:

তিনি বলেন, “আজ আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই। ধরুন কোথাও একটা ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদ রয়েছে... এখন আমি যদি সংসদের নিচে খোঁড়াখুঁড়ি করি, তাহলে তো সেখানেও কিছু না কিছু পাব। তাহলে কি সেটা আমার হয়ে যাবে?”

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, মোদি সরকারের আমলে যেভাবে একের পর এক মসজিদে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে নানা মহলেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। এটি দেশটিকে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলো উত্তর প্রদেশের সম্ভল।

উত্তর প্রদেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, মসজিদসহ সমস্ত প্রাচীন স্থাপত্যে এই ধরনের সমীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।

সেই আবহে সংসদে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির প্রায় ৯ মিনিটের ভাষণটিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তার সেই বক্তৃতায় ওয়াইসি বর্তমানে ভারতে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাবাসাহেব যেটা বলে গিয়েছিলেন, আজও সেটা সমান প্রাসঙ্গিক। আসলে কেউই চান না যে সংখ্য়ালঘুরা ক্ষমতা ভাগ করে নিক।”

ওয়াইসি এর ব্যাখ্য়া করে বলেন, “আমাকে একটু সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্য ব্যাখ্যা করতে দিন। (সংবিধানের) ২৫, ২৬, ২৯, ৩০, ১৪ এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলোই এর ভিত্তি প্রস্তুত করেছে। আমি বলব, এই বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করার মাধ্যমেই সমাজের দুর্বল শাখাগুলোতেও সুবিচার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।”

এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওয়াইসি ভারতের নানা প্রান্তে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি ঘটা হেনস্থার ঘটনাগুলোও তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে, ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য হলো- ‘ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো ছিনিয়ে নেওয়া’।

সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে ওয়াইসি বলেন, “আপনাদের হাতে থাকা ক্ষমতা ব্যবহার করে আপনারা আসলে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো ছিনিয়ে নিতে চাইছেন।”

এই বিলে এমন ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে, যাতে ওয়াকফ বোর্ডের প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক কাজ, যেমন - বিধবা, বিবাহ বিচ্ছিন্না এবং অনাথদের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়। সরকারের তরফে তেমনই প্রস্তাব রাখতে হবে।

ভারতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, বর্তমান সরকার যে ওয়াকফ বিল প্রস্তুত করেছে, তাতে মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বক্তব্য হলো, ওয়াকফ বোর্ডগুলো যেন স্বচ্ছতা এবং পূর্ণ দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতেই এই সংশোধনী প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে।

নিজের বক্তৃতায় ওয়াইসি আরো বলেন, “সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি পড়ুন। তাতে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে তাদের ধর্মীয় এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত করার ও বজায় রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন ওয়াকফের সঙ্গে নাকি সংবিধানের কোনো সম্পর্ক নেই! তাকে এসব কে শেখাচ্ছেন? তাকে আগে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি পড়তে বলুন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়