গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার ৯০ শতাংশ সম্পন্ন
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি প্রশ্নে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ওই কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে মূল বিষয়গুলো এখনো আলোচনার টেবিলেই রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরায়েলি সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রাখা। মিশর সীমান্তের ওই করিডোরটি কৌশলগতভাবে দক্ষিণ গাজার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার বিশদ বিবরণ সংবাদমাধ্যমটির কাছে তুলে ধরেছেন ওই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। এর মধ্যে রয়েছে গাজার সঙ্গে ইসরায়েল সীমান্তের দৈর্ঘ্য বরাবর কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত সম্ভাব্য একটি বাফার জোনের প্রস্তাব।
ওই এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি বজায় থাকবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এসব বিষয় সমাধান হলে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কয়েকদিনের মধ্যেই হতে পারে।
চুক্তিতে যুদ্ধবিরতির তিন ধাপের প্রথমটিতে মুক্তি পাওয়া প্রতিটি নারী সৈনিকের জন্য ২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যদিও বন্দীদের নাম এখনো সম্মত হয়নি, তবে ইসরায়েলে ২৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কারাদণ্ড ভোগ করছেন এমন প্রায় ৪০০ জনের নাম থেকে বেছে ওই তালিকা করা হবে। এর মধ্যে ফাতাহ নেতা মারওয়ান বারঘৌতিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে না, যার মুক্তিতে ইসরায়েলের ভেটো দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুক্তি প্রস্তাবনায় ইসরায়েলি জিম্মিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। গাজায় এখনো বন্দী ৯৬ জিম্মির মধ্যে ৬২ জন জীবিত আছে বলে মনে করছে ইসরায়েল।
এছাড়া যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে মিশর কিংবা কাতারের তত্ত্বাবধানে একটি ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। যার অধীনে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা উত্তরের দিকে ফিরে যেতে পারবেন। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক এই অঞ্চলে সহায়তা নিয়ে আসতে পারবে।
তিন ধাপের পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৪ মাসের যুদ্ধের অবসান দেখা যাবে, তখন টেকনোক্র্যাটদের একটি কমিটি গাজাকে তত্ত্বাবধান করবে। ওই কমিটিতে তারাই থাকতে পারবে- অতীতে যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইতিহাস নেই এবং যাদের প্রতি ফিলিস্তিনের সব পক্ষের সমর্থন থাকবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশর তাদের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু করে। এ সময় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য উভয় পক্ষের সর্বোচ্চ ইচ্ছার কথা সামনে আসে। এর আগে গত অক্টোবরের মাঝামাঝি আলোচনার মাধ্যমে সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়া হলেও হামাসের পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এতে ১২০০ জনের মতো নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫৩ জনকে। এ পর্যন্ত শতাধিক জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলে হামলার দিনই গাজায় অবরোধ আরোপ ও ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
ঢাকা/ফিরোজ