ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভয়াল সুনামির দুই দশক আজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪  
ভয়াল সুনামির দুই দশক আজ

২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ সাল। এই দিনে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপটি ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে উঠেছিল। ভারত মহাসাগরের তলদেশে সৃষ্ট কম্পনের কারণে ৩০ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। ঢেউয়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ৮০০ কিলোমিটার, অর্থাৎ বুলেট ট্রেনের চেয়ে দ্বিগুণ গতি। এই ঘটনায় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ ১৫টি দেশে নিহত হয়েছিল দুই লাখ ২৭ হাজার ৮৯৯ জন মানুষ।

দুই দশক আগে ভয়ঙ্কর সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে। শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই সুনামিতে এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনের দেহাবশেষ শনাক্ত করতে পারেনি। ভারত মহাসাগরের আরেক দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় সুনামিতে মারা গিয়েছিল ৩৫ হাজার ৩২২ জন মানুষ। বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে কলম্বো থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি ট্রেন লাইনচ্যূত হয়। এ ঘটনায় এক হাজার যাত্রী নিহত হয়। 

অনেকেই চোখের সামনে স্বজনদের পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখেছেন। সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনো অনেকে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন।

৬৮ বছরের জয়নাল আবিদীন সুনামিতে তার স্ত্রী এবং কনিষ্ঠ কন্যাকে হারিয়েছিলেন, যার বয়স ছিল ১২ বছর। আজো তিনি স্ত্রী ও কন্যার লাশ খুঁজে পাননি।

জয়নাল বলেন, “আমার মেয়ের কথা অনেক বেশি মনে পড়ে। সুনামির পর তিন মাস ধরে আমি এলাকায় ঘুরেছি আর সারক্ষণ কেঁদেছি।”

বেদনা এখনও তাজা কারণ কাট সিলভিয়া তার দুই বছর বয়সী মেয়ের চোখের দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে থাকার কথা মনে করে।

উত্তর সুমাত্রার ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় শহর বান্দা আচেহ-তে সুনামির খবর শুনে সিলভিয়া তার শিশুকন্যা এবং স্বামীকে নিয়ে পালাতে শুরু করেছিলেন। তবে ঢেউয়ের আঘাতে চোখের সামনে সিলভিয়ার শিশুকন্যা সিতি তার হাত থেকে ছুটে যায়।

ওই সময়টির কথা স্মরণ করতে গিয়ে সিলভিয়া বলেন, “আমি সেই মুহূর্তটি বর্ণনা করতে পারব না। আমি তার চোখ দেখেছিলাম, এবং সে আমার চোখ দেখেছিল এবং আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সে কাঁদছিল না বা কিছু বলছিল না। সে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি জানতাম যে আমরা আলাদা হয়ে যাব।”

বৃহস্পতিবার বাইতুররহমান গ্র্যান্ড মসজিদে তিন মিনিটের জন্য একটি সাইরেন বেজে উঠেছিল। এরপরেই নিহতদের স্মরণে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পরিবারগুলো প্রাদেশিক রাজধানী বান্দা আচেহ জুড়ে গণকবর পরিদর্শন করেছে।

থাইল্যান্ডে সুনামির আঘাতে পাঁচ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এদের অর্ধেকেরও বেশি ছিল পর্যটক। বৃহস্পতিবার দেশটির বান নাম খিম গ্রামে স্মরণ অনুষ্ঠান হয়েছে। স্বজনহারা মানুষরা গ্রামটিতে সুনামি ঢেউ আকারের একটি খোদাইকৃত  দেওয়ালে ফুল দিচ্ছে, ফুলের মালা রাখছে।  

৫৫ বয়সি নাপাপোর্ন সুনামিতে তার বোন এবং বোনের মেয়েকে হারিয়েছেন। তিনি এএফপিকে বলেছেন, “আমি শূন্যতা অনুভব করছি। প্রতিবছরই এই অনুষ্ঠানে আমি এখানে আসি।”

ঢাকা/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়