ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২০ ১৪৩১

বুশ ভাবতেন তিনি ঈশ্বরের পাঠানো মিশনে রয়েছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:৩৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
বুশ ভাবতেন তিনি ঈশ্বরের পাঠানো মিশনে রয়েছেন

ইরাক যুদ্ধের সময় একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করেছিলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বাস করতেন, ইরাকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাকে  ‘ঈশ্বর মিশনে’ পাঠিয়েছেন। এরপরই সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের উপদেষ্টারা ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্ন করেছিলেন,  ইরাকে সামরিক অভিযানের ‘যথাযথ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আছে কিনা। নতুন প্রকাশিত নথির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় আর্কাইভের প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, ইরাকের ফাল্লুজা শহরে একটি বড় বিদ্রোহ দমন করতে মার্কিন সামরিক অভিযানের পর ২০০৪ সালের এপ্রিলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘কিছু কঠিন বার্তা’ প্রদান করেছিলেন টনি ব্লেয়ার।

গোপন একটি নথিতে দেখা গেছে, ২০০৪ সালে ফাল্লুজায় মার্কিন চার সামরিক ঠিকাদারকে হত্যার পর ইরাকি বিদ্রোহীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে মার্কিন বাহিনী। ওই সময় প্রেসিডেন্ট বুশ ফাল্লুজার ওপর তীব্র আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বুশ। ওই বছরের এপ্রিলে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড আর্মিটেজ যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত স্যার ডেভিড ম্যানিংকে বলেছিলেন যে বুশের ‘বাস্তবতার ডোজ’ প্রয়োজন। 

ব্লেয়ারকে ১৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে আসন্ন সফরে তার প্রভাব ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন আর্মিটেজ। তার ভাষ্য ছিল ব্লেয়ার যেন ফাল্লুজায় মোকাবিলার বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনার’ অনুরোধ জানান বুশকে।

২০০৩ সালের মে মাসে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ইউফ্রেটিস নদীর উপর একটি সেতুতে মার্কিন ঠিকাদারদের বিকৃত মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপরেই মার্কিন বাহিনী ফাল্লুজায় অপারেশন ভিজিল্যান্ট রেজলভ শুরু করেছিল।

বুশ প্রাথমিকভাবে তার সামরিক জেনারেলদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তিনি চেয়িছিলেন মার্কিন নৌসেনারা যেন শহর দখলের পর বাসিন্দাদের পশ্চাৎদেশে লাথি মারে। কিন্তু সাদ্দামের পতনের পরে গঠিত জোটের অস্থায়ী সরকারের সদস্যরা আশঙ্কা করেছিলেন যে মার্কিন সামরিক প্রতিক্রিয়া একটি স্বাধীন ইরাকি প্রশাসন প্রতিষ্ঠার আশাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত স্যার ডেভিড ম্যানিং পরে লন্ডনে ফিরে বলেছিলেন, এই ‘বাস্তবতার ডোজ’-এর মুখোমুখি হওয়ার পরে বুশ পিছিয়ে যান।

ম্যানিং বলেছিলেন, রিচার্ড আর্মিটেজ “এই বলে উপসংহার টেনেছিলেন যে বুশ এখনো ভাবছেন তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাঠানো কোনো  মিশনে রয়েছেন৷। কিন্তু সেই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তাকে অনেক বেশি শান্ত করে তুলেছে।”

মার্কিন ও ব্রিটিশ জোট বাহিনী সাদ্দামকে উৎখাত করার পর বুশ তার বিখ্যাত উক্তি ‘মিশন সম্পন্ন’ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওই সময় দাবি করা হয়েছিল, বুশ ২০০৩ সালে একটি ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন যে ঈশ্বর তার সাথে কথা বলেছেন এবং বলেছিলেন: ‘জর্জ, আফগানিস্তানে এই সন্ত্রাসীদের সাথে লড়াই কর’ এবং ‘জর্জ, যাও ইরাকের অত্যাচারের অবসান ঘটাও।’

অবশ্য হোয়াইট হাউস এই প্রতিবেদনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে খারিজ করে দিয়েছিল।
 

ঢাকা/শাহেদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়