যে কারণে গাজায় হাইপোথার্মিয়ায় শিশুরা মারা যাচ্ছে
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ঠান্ডা আবহাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহে হাইপোথার্মিয়ায় ছয়টি শিশু মারা গেছে। একদিকে ত্রাণের অভাব, আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালগুলো বিধ্বস্ত ও অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বয়স্করা কোনোরকম টিকে থাকতে পারলেও এই পরিস্থিতিতে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের
হাইপোথার্মিয়া কী?
হাইপোথার্মিয়া, যার আক্ষরিক অর্থ স্বাভাবিক তাপের নিচে এমন একটি অবস্থা যখন শরীর তাপ উৎপন্ন করার পরিবর্তে তা দ্রুত হারায়।
শরীর সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখে। এর জন্য বিপাকীয় তাপ উৎপাদনের মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, যার মধ্যে খাদ্য হজম বা চলমান পেশী অন্তর্ভুক্ত থাকে। ব্যক্তি, দিনের সময় এবং কার্যকলাপের স্তরের উপর নির্ভর করে মূল তাপমাত্রাটি প্রায় এই স্তরে বজায় রাখতে হবে। এই তাপমাত্রা মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে সঠিকভাবে কাজ চালিয়ে যেতে দেয়।
যাইহোক, যখন শরীর আর তাপের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না এবং অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যায়, তখন শরীর হাইপোথার্মিয়া অবস্থায় প্রবেশ করে।
কোন তাপমাত্রায় হাইপোথার্মিয়া হয়?
হাইপোথার্মিয়া বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে শরীরের মূল তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। কারণ এটি কেবল হিমায়িত অবস্থায় নয়, হালকা ঠান্ডায়ও হতে পারে। বৃষ্টি, বাতাস বা ঠাণ্ডা পানিতে নিমজ্জিত হলে একজন ব্যক্তির ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায়ও হাইপোথার্মিয়া হতে পারে।
চিকিৎসাগতভাবে, হাইপোথার্মিয়া শুরু হয় যখন শরীরের মূল তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নেমে যায়, যা তার গড় থেকে প্রায় দুই ডিগ্রি কম।
অবস্থার তীব্রতা নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কতটা কমছে তার উপর:
হালকা হাইপোথার্মিয়া: ৩২-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
মাঝারি হাইপোথার্মিয়া: ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
গুরুতর হাইপোথার্মিয়া: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে গাজার তাপমাত্রা দিনে প্রায় ১৯ ডিগ্রি সেলসিযাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল
যাইহোক, গাজায় বর্তমান শীতকাল তাঁবুতে বা উপযুক্ত আশ্রয় ছাড়া বসবাসকারীদের জন্য অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কারণ ভারী বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের কারণে অস্থায়ী আবরণ নষ্ট হয়ে গেছে, পোশাক ও কম্বল ভিজে গেছে। ইসরায়েলের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে জ্বালানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস হিটারে সীমিত সুবিধার কারণে তীব্র শীতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে গাজার বাসিন্দাদের। শিশুদের জন্য এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।
শিশুরা তাদের ত্বকের মাধ্যমে দ্রুত তাপ হারায়, বিশেষ করে ঠান্ডা পরিবেশে। যেহেতু তাদের ছোট শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের মতো দক্ষতার সাথে তাপ উৎপাদন করতে পারে না, তাই তারা খুব ঠান্ডা হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। গুরুতর অপুষ্টিও হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার অর্থ হল ছিটমহলটি এক বছর ধরে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির সাক্ষী হয়ে আসছে।
ঢাকা/শাহেদ