ঢাকা     বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৪ ১৪৩১

৩ দেশের পর ভারতেও ‘এইচএমপিভি’, মাস্ক পরার পরামর্শ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৬ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২২:৫৭, ৬ জানুয়ারি ২০২৫
৩ দেশের পর ভারতেও ‘এইচএমপিভি’, মাস্ক পরার পরামর্শ

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণ লক্ষণ ঠান্ডা, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, র‌্যাশ; ফলে সচেতন থাকতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কোভিড মহামারির প্রায় পাঁচ বছর পর নতুন করে আরেক ভাইরাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিশ্বে। নাম ‘হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস’ (এইচএমপিভি)। করোনার মত এবারো চীনে প্রথম শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। চীন ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে মালয়েশিয়া ও জাপানে। আর সবশেষ শনাক্ত হয়েছে ভারতে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, দেশটির বেঙ্গালুরুতে ২, আহমেদাবাদে ১ এবং কলকাতায় ১ শিশুর দেহে এইচএমপিভি ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় সচেতনতার পাশাপাশি দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাস্ক পরার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন।

যদিও সংক্রমিত এই চার শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কেউই সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে ভ্রমণ করেনি। ফলে বাইরের কারো কাছ থেকে তারা নতুন ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, এমনটি বলা যাচ্ছে না।

নতুন করে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস সম্পর্কে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চল এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে নিশ্চিত করেছে চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (চায়না সিডিসি)। এইচএমপিভি ভাইরাস সব বয়সী মানুষকে আক্রান্ত করার সক্ষমতা রাখলেও শিশুরা সবচেয়ে বেশি শিকারে পরিণত হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রতিবেদনে অবস্থার ভয়াবহতা ফুটে উঠলেও চীনা কর্তৃপক্ষ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কেউই এখনো জরুরি অবস্থা জারি করেনি।

এর আগে, ২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়েছিল।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যে কোনো সময়ে দেশটি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলেও দাবি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের।

চীনের মতো একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে সাত লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে।

মালয়েশিয়াতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিক টাইমস।

এই পরিস্থিতিতে আগে থেকেই সতর্ক ছিল ভারত। শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। সেই সঙ্গে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, এটা নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এমনকি এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। কোভিড-১৯ একেবারে ভিন্ন ও নতুন আবহের ভাইরাস হওয়ায় এর প্রাদুর্ভাব বা মহামারির রেশ এতটা বিস্তর হয়েছিল। তবে এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

এইচএমপিভির টিকা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

২০০১ সালে প্রথম আবিষ্কার হলেও এইচএমপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কোনো টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এতে সংক্রমিত হলে চিকিৎসার জন্য ওষুধও নেই। এ পরিস্থিতি ভয়ের কারণ হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে লাখ লাখ এমন ভাইরাস রয়েছে, যার কোনো টিকা বা ওষুধ নেই। তাই বলে সেই ভাইরাসের সংক্রমণে মানুষ মারা যাচ্ছেন, এমন কিন্তু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ নিজে থেকে সেরে যায়। পোলিও, মিসলসের মতো কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে যথেষ্ট শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। তাই এগুলোর টিকা আগে থেকে দেওয়া হয়। নয়তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ম হল সংক্রমণের বহর দেখে টিকা তৈরি করা। ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে যদি ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে, তখনই ওষুধ ও টিকা তৈরির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিজ্ঞানিরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন জানান, অধিকাংশ ভাইরাসেরই সরাসরি কোনো ওষুধ নেই। তবে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে; এটির ক্ষেত্রেও তাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি।

কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ কোভিডের মতো প্রাণঘাতী নয়। তবে শিশুদের ও খুব বয়স্কদের সাবধানে থাকা জরুরি। 

ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ডা. অতুল গয়াল বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে এইচএমপিভি সাধারণ ফ্লু, প্রাথমিকভাবে এটি সাধারণ ফ্লু বলেই মনে হচ্ছে। তবে ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সংক্রমণ যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় ব্যবহৃত রুমাল বা তোয়ালে পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ছাড়া ঠান্ডা ও জ্বরের জন্য সাধারণ ওষুধ সেবন করলেই হবে।’’

যে কোনো সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় যে পরিচ্ছন্নতা। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শিশু, বয়স্ককে পরিচ্ছন্নতায় জোর দিতে হবে। যে কোনো কিছু খাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করতে হবে। মাস্ক পরায় গুরুত্ব দিতে হবে। অযথা ভয় পাবেন না, কিন্তু সতর্ক থাকতে ভুলবেন না। পরিচ্ছন্নতাই সংক্রমণ রুখতে পারে।

বাইরে থেকে আসলে বাথরুমে গিয়ে পোশাক বদলে হাত-মুখ সাবান দিয়ে তবেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন। কেননা বাইরে নানা মানুষের সংস্পর্শে থাকায় অদৃশ্য ভাইরাস আপনার সঙ্গে বাড়িতে চলে আসতে পারে।

যেসব বাচ্চার অ্যালার্জিজনিত হাঁচি, সর্দি লাগা বা হাঁপানির প্রবণতা আছে, তাদের সাবধানে রাখুন। বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।

এই ভাইরাসও ড্রপলেট, অর্থাৎ হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায়। এ ব্যাপারে সাবধানে থাকতে হবে। তাদের সর্দিকাশি হলে তার কাছাকাছি যেতে নেই। 

সর্বোপরি চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। সে সব সতর্কতা মেনেই চলতে হবে।

ঢাকা/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়