গ্রিনল্যান্ড না দিলে ডেনমার্ককে শায়েস্তা করার হুমকি ট্রাম্পের
গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে না দিলে ডেনমার্ককে শায়েস্তা করার নতুন হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতেই নড়চড়ে বসেছে ডেনমার্ক। ড্যানিস রাজা থেকে প্রধানমন্ত্রী- সবাই প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রাম্প। সেখানে সাংবাদিকরা গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে তার পরিকল্পনা জানতে চান। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন ট্রাম্প।
বিবিসি লিখেছে, সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, যদি ডেনমার্ক তাদের গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে না দেয়, তাহলে তাদের ওপর ‘খুবই উচ্চ’ মাত্রার শুল্ক আরোপ করা হবে।
আর্কটিক ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এর অবস্থান উত্তর আমেরিকায়। এটি ড্যানিস সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যার প্রধান ডেনমার্কের রাজা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ট্রাম্প তার দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সব কিছুই অপসারণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ট্রাম্পের ভাষায়- গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের হাতে না থাকায় তার দেশকে বাণিজ্যিক দিক থেকে বহুমূল্যের লোকসান দিতে হচ্ছে। ফলে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসাই উচিত।
ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণে গেছেন। তবে একে ব্যক্তিগত সফর হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি। অবশ্য ট্রাম্পের হুমকির মধ্যেই তার ছেলের গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণকে বিশেষ বার্তা হিসেবে বর্ণনা করেছে বিশ্ব গণমাধ্যম। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকেও তার ছেলের গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তবে সেদিকে না গিয়ে সাংবাদিকদের অন্য প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ বুঝে পেতে তিনি কোন ধরনের কৌশল অবলম্বন করবেন। তিনি কি সামরিক হস্তক্ষেপ করবেন নাকি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেবেন? জবাবে কোনোটির সম্ভাবনাই নাকচ করেননি তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “না, আমি আপনাকে এই দুটির একটির বিষয়েও আশ্বস্ত করতে পারি না।” অর্থাৎ প্রয়োজন হলে যে কোনো উপায়ই তিনি অবলম্বন করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি এটা বলতে পারি, আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য তাদের (গ্রিনল্যান্ড) প্রয়োজন।”
ট্রাম্পের হুমকির পর সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ড্যানিস রাজা ফ্রেডেরিক। তিনি রাজকীয় অস্ত্রসস্ত্রের প্রতীকেই পরিবর্তন আনার ইচ্ছা প্রকাশ করে নতুন নকশা তৈরি করেছেন। তাতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক থেকে সুইডেন ও নরওয়েকে বাদ দিয়ে গ্রিনল্যান্ড ও ফোরে দ্বীপের প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে ভাল্লুক ও গড্ডল যুক্ত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্কের চিরন্তন অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিহিৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন রাজা ফ্রেডেরিক।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেনও ট্রাম্পের বক্তব্যকে পাত্তা দেননি। তিনি বলেছেন, “গ্রিনল্যান্ডের মালিক গ্রিনল্যান্ডাররাই। তারাই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।”
পানামা খালও চান ট্রাম্প
পুনর্নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প বারবার যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের ধারণায় জোর দিয়ে যাচ্ছেন। পানামার নিয়ন্ত্রণ থেকে পানামা খাল ফিরিয়ে নেওয়ার কথা একাধিকবার উচ্চারণ করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “খালটি আমাদের দেশের জন্য খুবই অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেছেন, “এটি চীনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।”
এর আগে ট্রাম্প অভিযোগ তুলেছিলেন, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযোগকারী জলপথ পানামা খাল ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে। এর ব্যবস্থাপনায় চীন জড়িত থাকায় এমন অতিরিক্ত মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের।
তবে পানামা প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো ট্রাম্পের অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, “খালটিতে চীনা হস্তক্ষেপ একদমই নেই।”
হংকং-ভিত্তিক একটি কোম্পানি সিকে হাচিসন হোল্ডিংস খালের প্রবেশপথে দুটি বন্দর পরিচালনা করে।
পানামা খাল ১৯০০ দশকের গোড়ার দিকে কাটা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত খালটির ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল। অবশ্য চুক্তি অনুযায়ী, ধীরে ধীরে পানামার কাছে খালের মালিকানা বুঝিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, পানামা খাল পানামাকে বুঝিয়ে দেওয়া ছিল বিরাট ভুল।
ঢাকা/রাসেল/ইভা